মৌসুমি আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে বন্দর নগরীর জনজীবন বিপর্যস্ত। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৩৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে নিচু এলাকার বাসিন্দারা।
২১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ ও পূর্বাভাস কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি পাল।
তিনি জানান, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এজন্য চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদী বন্দরের জন্য ১ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত। আর উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উওর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকুলীয় এলাকা এবং সমুন্দ্র বন্দর সমুহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এছাড়া দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বাতাসের দিক ও গতিবেগ দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিক হতে ঘণ্টায় ১০-১২ কিলোমিটার বেগে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৪৫-৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, হালিশহর, ইপিজেড, চকবাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, ২ নং গেট, প্রবর্তক, বহদ্দারহাট সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গেছে। অলিগলি-ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সড়কে আটকা পড়েছে যানবাহন। চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে তা এখন বন্ধ। তিন বছর মেয়াদকালের এ প্রকল্পের দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনও খাল খনন, খাল পরিষ্কার এবং খাল উদ্ধারের কাজ অনেক বাকি রয়েছে। ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের পাথরঘাটার টেকপাড়া, কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবি খাল, মহেশখালে, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, চাক্তাই খাল এবং রাজাখালী খালে স্লুইস গেইটের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ নিয়ে হাসপাতাল ওয়ার্ড মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, জোয়ারে এলেই হাসপাতালের নিচতলা ডুবে যায়। প্রতিদিন দুইবার পানি ঢুকছে। নিচতলার আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা উপরের তলায় বসে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
বন্দর থানার ফকিরহাট এলাকার মুদি দোকানদার মো. ফারুক জানান, বৃষ্টির কারণে দোকান খুলতে দেরি হয়েছে। দোকানের ভিতর হাঁটুপানি জমে অনেক পণ্য বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন জানান, করোনার কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকলেও নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। তবে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও কোথাও পানি জমা হয়ে আছে। তাতে কিছু মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।