ePaper

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে : ডিজি স্বাস্থ্য শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রার্থীদের মেধা, বুদ্ধিমত্তা এবং মানবিক গুণাবলীকে প্রাধান্য দিয়ে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও এ বছর ভর্তি পরীক্ষা কিছুটা এগিয়ে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান পদ্ধতিতে সিঙ্গেল বেস্ট এমসিকিউ রিকল প্রশ্নপত্রে মুখস্থ বিদ্যা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এর পাশাপাশি প্রার্থীদের মেধা, মননশীলতা, মানবিকতা, বুদ্ধিমত্তা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা যাচাই করার বিষয়টি যুক্ত করা নিয়ে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনদের সাথে পরামর্শ করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মেধাবী, দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক তৈরি করতে সম্ভাব্য সেরা প্রার্থীরা যেন সুযোগ পান, সেই বিবেচনাতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে সংস্কার আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক হওয়ার জন্য মেধার পাশাপাশি কিছু মানবিক গুণাবলী থাকা দরকার। শুধু মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হলেই হবে না, তার বিশ্লেষণী ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা এবং মানবিক গুণাবলী থাকাটাও জরুরি। চিকিৎসা পেশা অন্য সব পেশা থেকে আলাদা। এই পেশায় মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি মানবিকতা, যোগাযোগ দক্ষতাসহ নানা গুণাবলী থাকতে হয়। চিকিৎসা পেশাকে একটি মানবিক পেশা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মেধাবী মানুষদের এই মহান পেশায় আনার জন্য অনেক দেশেই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যা আমাদের নেই। সেটাই ধীরে ধীরে আগামী বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের এনালাইটিক্যাল অ্যাবিলিটি, এটিচ্যুড এবং নন-কগনিটিভ স্কিল যাচাই করার বিষয়টি যুক্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞগণ পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বিদ্যমান সিঙ্গেল বেস্ট এমসিকিউ পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিষয়টি খুব সহজ নয় বলে ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। শিগগিরই বিএমডিসি, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তা জানিয়ে দেয়া হবে যাতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পান। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, এ বছর ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বরের ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রশ্নে এ ধরনের পরিবর্তন আনা এবং আগামী দুই/তিন বছরের মধ্যে তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। তবে বিদ্যমান সিঙ্গেল বেস্ট এমসিকিউ পদ্ধতির মাঝে কীভাবে এই পরিবর্তন আনা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। গত সেশনে ভর্তি পরীক্ষা জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনা করে এবার এগিয়ে এনে তা ডিসেম্বর মাসে করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যে-কোনো অসদুপায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, পরীক্ষার সময় আসলেই বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সন্ধানীরা তৎপর হয়ে ওঠে। প্রশ্নপত্র কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে প্রণয়ন করা হয়, যাতে প্রশ্ন ফাঁসের কোন সুযোগ থাকে না। প্রণয়ন করা সেই প্রশ্নপত্রগুলোকে রেডি করে সারা দেশের শত শত পরীক্ষার হলে নিরাপদে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয় এবং পুরো বিষয়টা সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সঙ্গে করতে হয়। গত বছরে এটা আল্লাহর রহমতে সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয়েছে, আশা করছি এ বছরও ইনশাল্লাহ একইভাবে সম্পন্ন হবে। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যেমন গত বছর প্রশ্ন ফাঁস না হলেও প্রশ্ন ফাঁসের গুজব দিয়ে কিছু কুচক্রীমহল মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা কুচক্রীমহলে বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, আসলে এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা দরকার। আপনাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য প্রতারক চক্র বসে আছে। তাদের ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ধরনের কোন খবর পেলে সাথে সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অথবা আমাদের জানালে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে। ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, সেরা চিকিৎসক তৈরির জন্য একটি সুষ্ঠু ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন শুধু বিএমডিসি বা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একার কাজ নয়, জাতীয় স্বার্থে এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব। এ জন্য তিনি চিকিৎসক, সুশীলসমাজ, সংবাদমাধ্যমসহ সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন। সম্প্রতি বহুল আলোচিত একটি প্রসঙ্গ-বিগত বছর সমূহে অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা অব্যবহৃত সরকারি ভবন স্থাপনা বা ভবনগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এই ভবনসমূহ অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত একটি সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে-স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষা দুই বিভাগ মিলে এ ধরনের অন্তত ৮১টি ভবন রয়েছে। এই সকল এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এ ধরনের ভবনগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, বৈঠকে এই বিষয়ে একটি কমিটি করারও প্রস্তাব করা হয়েছে, যারা পরীক্ষা করে দেখবে এ সকল ভবন কীভাবে কাজে লাগানো যায়। এগুলো জনগণের করের অর্থে তৈরি ব্যয়বহুল ভবন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন এমন ১০টি ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে- জানিয়ে নাজমুল হোসেন বলেন, এই ভবনগুলোর জন্য করণীয় কিছু কর্মপরিকল্পনা আমরা নির্ধারণ করেছি। এ ভবনগুলোর কোনটিকে দ্রুত ব্যবহার করার ব্যবস্থা অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের পাঁচটি ভবনকে মেডিকেল শিক্ষার্থী, ইন্টার্নি চিকিৎসকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রামীণ পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়ার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের একটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন এই প্রস্তাবিত বিকল্প অথচ জরুরি উদ্দেশ্য সাধিত হবে এবং অন্যদিকে এই অব্যবহিত স্থাপনাগুলো অকালে ধ্বংস হওয়া রক্ষা পাবে বলেও জানান তিনি। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তঃমেডিকেল কলেজ সাংস্কৃতিক উৎসব প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, এই প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সারাদেশের মেডিকেল কলেজগুলো নিয়ে এই তারুণ্যের উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে ৯টি কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজে উৎসবমুখর পরিবেশে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের আয়োজনটির সম্পূর্ণ ব্যয়ভার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অংশগ্রহণকারী মেডিকেল কলেজসমূহ বহন করেছে এবং কোন ওষুধ কোম্পানি বা তৃতীয় পক্ষের আর্থিক অনুদান গ্রহণ করা হয়নি। এখন থেকে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হবে জানিয়ে নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চায় ব্যস্ত থাকুক। এটা তাদের উন্নত মন মানসিকতা গঠনে সহায়ক হবে, এবং বিপথগামিতার আশঙ্কা থেকেও তাদেরকে রক্ষা করবে। এখন থেকে প্রতি বছর এই আন্তঃমেডিকেল কলেজ সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজিত হবে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *