কুড়িগ্রামে এ বছর ২০ কোটি টাকার লটকন উৎপাদন হয়েছে। সুস্বাধু ও রসালো এই ফলটির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ায় লটকনের চাহিদা বাড়ছে দেশের সর্বত্র। ভালোমানের লটকন কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন পাইকাররা। কেউ কেউ লাখ লাখ টাকা আগাম লগ্নি করছেন। দুই মাস ধরে লটকনের কারবারে জড়িয়ে থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষের। বরিশাল, ফরিদপুর, যশোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বাস, ট্রাক, পিকআপযোগে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন মোকামে। লটকন চাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী, হলোখানা, রাজারহাটের সদর ও ছিনাই ইউনিয়নে লটকনের চাষ বেশি হয়। এ বছর লটকনের চাষ হয়েছে ১৫৫ হেক্টর জমিতে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে লটকন সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। কাঁঠালবাড়ী বাসস্ট্যান্ড ও ছিনাই এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ খাঁচা লটকন দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। প্রতিটি খাঁচায় লটকন থাকে গড়ে ৩০০ কেজি। ফলে দৈনিক এক হাজার ৫০০ মণ লটকন চলে যায়। বর্তমানে প্রতি মণ লটকন কৃষক পর্যায়ে গড়ে দুই হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দুই মাসে ২০ কোটি টাকারও বেশি লটকন উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের লটকন চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, কুড়িগ্রামের লটকনের রং ভালো, স্বাদেও অতুলনীয়। তাই এখানকার লটকনের চাহিদা বেশি। কুড়িগ্রামে ছোট-বড় মিলে কয়েক হাজার লটকন চাষি আছেন। সুপারি বাগানের ফাঁকে ফাঁকে রোপণ করা পাঁচ শতাধিক লটকনগাছ কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই ফলবতী হয়ে অর্থকরী হয়ে উঠছে। এই মৌসুমে তিনি তাঁর বাগানের লটকন চার লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। এলাকার সফল লটকন চাষি শিবরাম গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি এই মৌসুমে তাঁর লটকন বাগান তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। মহেন্দ্র নারায়ণ গ্রামের লটকনের পাইকার তাজুল ইসলাম জানান, এ বছর ২০ লাখ টাকার আগাম লটকন কিনেছেন তিনি। বাজার ভালো থাকায় লাভও ভালো পাচ্ছেন। শিবরাম গ্রামের লটকন ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান, এ বছর তিন হাজার মণ লটকন আগাম কিনেছেন বাগান থেকে। দুই হাজার মণ বিক্রি করেছেন। সিলেট, বগুড়া, বরিশাল, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় লটকন পাঠাচ্ছেন। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ঠিকমতো লটকন পাঠাতে পারেননি। ফরিদপুর থেকে আসা পাইকার বিশ্বজিৎ চন্দ্র জানান, স্থানীয় এক বাড়িতে ভাড়া থেকে মাসখানেক ধরে লটকন কিনে নিজেদের এলাকায় পাঠাচ্ছেন। এখানে লটকনের প্রচুর উৎপাদন হওয়ায় এবং গুণগত মান ভালো হওয়ায় শত শত পাইকার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিনিয়োগ করছেন লটকনের কারবারে। কাঁঠালবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের মোটর শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন লটকন গাছ থেকে উত্তোলন, প্যাকেটজাতকরণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন কাজে পাঁচ শতাধিক মানুষের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আসাদুজ্জামান জানান, লটকনগাছ ছায়াযুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠে বলে অনেকেই সুপারি বাগানে সুপারি উৎপাদনের পাশাপাশি লটকন উৎপাদন করছেন। কম খরচে ফসলটি লাভজনক হওয়ায় এবং আগাম বিক্রিসহ বিপণন সুবিধা থাকায় কুড়িগ্রামের সাতটি উপজেলায় লটকনের চাষ বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই লটকন চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। জেলায় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব বাগানের প্রতিটিতে লটকন চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে বিপুলভাবে লাভবান হবেন চাষিরা