আউশ শব্দের অর্থ আগাম। বাংলা আশু শব্দ থেকে আউশ শব্দের উৎপত্তি। আউশ মানে আশু ধান। আশি থেকে ১২০ দিনের ভেতর এ ধান ঘরে তোলা যায়। আশু মানে দ্রুত ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের এমন নামকরণ হয়েছে। খনার বচনে আছে, আউশ ধানের চাষ, লাগে তিন মাস। ফাঁক ফাঁক করে লাগালে গোছা মোটা হয় এবং ফলনও বেশি হয়। আরও সহজ কথায়, আউশে আমন-বোরোর মতো যত্ন নিলে বাম্পার ফলন হয়। কথায় আছে, জ্যৈষ্ঠে খরা ধানে ভরা। অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাসে একটু বৃষ্টি পেলেই আউশের জমি সবুজ ধানে ভরে যায়। আউশের উৎপাদন বাড়াতে সরকারি প্রণোদনা পেয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কৃষকরা। এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আউশ ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। আউশ ধান চাষাবাদে কৃষকদের এমনিতেই খরচ কম হয়। তার ওপর বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়ে আউশ চাষাবাদে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কৃষকদের সবসময় পরামর্শ এবং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে আউশ ধানের চাষ বাড়াতে সরকারি বরাদ্দে ১ হাজার ৮৬০ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে খাদ্য সংকট কাটাতে কৃষকের ঘামঝরা পরিশ্রম আর সরকারের দেওয়া কৃষি প্রণোদনায় আউশ চাষে নবদিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। আউশ চাষাবাদ পুরোটাই বৃষ্টি নির্ভর। ফলে এ ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেচের খরচ সাশ্রয় হয়। বিনামূল্যে সার ও বীজ পাওয়ায় কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় দিন-রাত ফসল ফলানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাড়াশ উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ী গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মধ্যে আমাদের এলাকায় আউশ ধানের আবাদ বেশি হয়। আউশের আবাদে খরচ কম, লাভ বেশি। এ ছাড়া কৃষকরা উফশী ও স্থানীয় জাতের আউশ ধানের আবাদ বেশি করেন। সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়ায় কৃষকরা এখন বেশি ঝুঁকছেন আউশ আবাদে।