মালয়েশিয়ায় সহজে ও স্বল্প সময়ে ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ই-পাসপোর্ট ও ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কল সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) কুয়ালালামপুরে সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত থেকে তিনি এর উদ্বোধন করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান ফিতা কাটেন। এ সময় এই সার্ভিসের জন্য চুক্তিবদ্ধ আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ‘এক্সপ্যাট সার্ভিসেস লিমিটেড’ (এএসএল) কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, প্রবাসী মিডিয়াকর্মীসহ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
কল সেন্টার চালুর জন্য হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের সেবা ও কল্যাণ নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রবাসী-বান্ধব নীতি’ অনুসরণ করছেন। এ লক্ষ্যে, ৩০ ডিসেম্বরকে ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ ঘোষণা করেছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের সীমিত জনবল দিয়ে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত ১২ লাখের বেশি প্রবাসীদের পাসপোর্টসহ অন্যান্য সেবা এবং বিদেশিদের ভিসা সেবা দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় এসেছেন। ফলশ্রুতিতে, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় হাইকমিশনের কাজের পরিধি বহুলাংশে বেড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ ধারণার আদলে সরকারের নির্দেশনায় পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা সহজ ও দ্রুততর করতে আউটসোর্সিং কোম্পানি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি সার্ভিস সেন্টারটি পরিদর্শন করেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবাসী-বান্ধব নীতি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় কল সেন্টার চালু হলো।
এ সময় শীঘ্রই ই-পাসপোর্ট ও ভিসা দেওয়ার কার্যক্রম চালু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসী-বান্ধব নীতি বাস্তবায়নে দূতাবাস আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও হাইকমিশনার উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রবাসী-বান্ধব নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সম্প্রতি কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপ্যাট সার্ভিসেস লিমিটেড (এএসএল) কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে। ই-পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে আবেদন ফরম পূরণ, স্ক্যান ও বায়োমেট্রিকসহ আবেদনের সব কার্যক্রম ইএসএল সম্পন্ন করবে। হাইকমিশন মালয়েশিয়ার পোস্টাল বিভাগের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ নিশ্চিত করবে।
ই-পাসপোর্ট এবং মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশের ভিসা দেওয়ার লক্ষ্যে কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে জালান দুয়া-চান শো লিনে (সিটি সেন্টারের পাশে) প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুট প্রশস্ত ভবন ভাড়া নিয়ে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে সুসজ্জিত করা হয়েছে। সেই ভবনে বিশাল খোলামেলা জায়গার পাশাপাশি উন্নতমানের সুপরিসর স্যানিটেশনসহ আধুনিক ভবন ব্যবস্থাপনার সব সুবিধাদি রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ভবনটি যে এলাকায় অবস্থিত সেখানে সহজে যাতায়াতের জন্য সব নাগরিক সুবিধা যেমন, বাস, এলআরটি, এমআরটি বিদ্যমান রয়েছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে চালুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই এখানে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে এবং ৪৫টি সার্ভিস কাউন্টার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কাজ করায় পুরো প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহীতাকে একবার মাত্র সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে। আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসএল কুয়ালালামপুরের বাইরে একাধিক রাজ্যে যেমন জহরবাহরু ও পেনাং এ হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে মোবাইল টিমের মাধ্যমে সেবা দেবে। ইএসএল পরিচালিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারটির সার্বিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় সরাসরি হাইকমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং সিসিটিভি-এর মাধ্যমে তা হাইকমিশন থেকে সরাসরি মনিটরিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নত দেশসমূহের আদলে এ ধরনের আয়োজন প্রবাসে সেবা সহজতর ও দ্রুততর করবে এবং সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা যায়।
কল সেন্টারের টেলিফোন নাম্বার: ০৯৩২১২০২৬৭। সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাসপোর্ট ও ভিসা বিষয়ে এ নম্বরে কল করে পরামর্শ নেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে সেবা সপ্তাহ পালন করছে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। এর শেষ দিনে এ কল সেন্টার উদ্বোধন করা হলো।