বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাব ও আড়াইহাজারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বান্টি এলাকায় হরতালের সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। এতে বিএনপির ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপির সাত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাবের পেছনের বালুরমাঠ রেলগেট থেকে বিএনপির একটি মিছিল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বিএনপিকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের রাবার বুলেটের কাছে টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এছাড়াও বেলা ১১টার দিকে শহরের রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে এবং ডন চেম্বারের সামনে দুইটি বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এসময় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জুয়েল, মহানগর যুবদল নেতা ওয়াদুদ সাগর, সুজন ও সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহসান বলেন, প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির লোকজন মিছিল নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপরদিকে, আড়াইহাজারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল বের করেন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় মহাসড়কের পাঁচরুখী এলাকায় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন বান্টি বাজার থেকে পাচরুখী পুরো এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় এক ঘন্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ খান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ, যুবদল নেতা মুছা সিরাজী, মীর মেহেদী হাসানসহ অন্তত ১৫ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম জানান, আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে আগুন জ্বালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছে। পুলিশ নিজের কাজ করতে এগিয়ে গেলে ওরা পুলিশের ওপরও হামলা করে। পরবর্তীতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও বলেন, পিকেটিং ও জ্বালাও পোড়াওয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট সাত জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে একজন কাউন্সিলর রয়েছেন ইকবাল নামে।