নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় আল আমিন ভান্ডারি (৪৮) নামে এক কবিরাজের গলা কাটা মরদেহ এবং বন্দর উপজেলায় সামির (৯) ও তিশা (৮) নামে নিখোঁজ দুই শিশু সহোদরসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটার দিকে বন্দর খেয়াঘাটের পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য খনন করা ডোবার পানি থেকে সদর নৌ থানা পুলিশ দুই সহোদরের এবং দুপুরে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ চতলার মাঠ এলাকার মৃত তৈয়ুব আলী মেম্বারের বাড়ির নিচতলার একটি বাসা থেকে থানা পুলিশ কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার করে। পরিবারের সদস্যদের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুই সহোদরের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং নিহত করিবারজ আল আমিন ভান্ডারির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টরিয়া) হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত আল আমিন ভান্ডারি পিরোজপুর জেলার সদর থানার দক্ষিণ পুকুরিয়া এলাকার হারুনুর রশীদের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কবিরাজ। তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী ও প্রথম পক্ষের ছেলেকে নিয়ে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ চতলার মাঠ এলাকার ওই ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। অপরদিকে, বন্দর ঘেয়াঘাট এলাকার ডোবা থেকে উদ্ধার হওয়া সামির (৯) ও তার বোন তিশা (৮) উপজেলার আমিন আবাসিক এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে-মেয়ে। তাদের বাবা একজন রিকশাচালক। নিহত কবিরাজ আল আমিন ভান্ডারির ছোটভাই আলিম শেখ বলেন, তার বড় ভাই আল আমিন ভান্ডারি বর্তমানে কবিরাজি করলেও এক সময় জাহাজে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। তিন বছর আগে তিনি জাহাজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নোয়াখালিতে তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বসবাস শুরু করেন। দেড় বছর আগে তিনি ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ চতলারমাঠ এলাকায় পুনরায় এসে বসবাসের পাশাপাশি কবিরাজি শুরু করেন। তিনি বলেন, জাহাজে চাকরি করাকালীন একই জাহাজে কর্মরত হাফেজ মাস্টার নামে একজনের সঙ্গে তার ভাইয়ের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে হাফেজ মাস্টার প্রায় সময় তার ভাইয়ের কাছে আসতেন এবং রাত্রিযাপন করতেন। তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হাফেজ মাস্টার তার ভাইয়ের কাছে আসেন। সঙ্গে একটি কালো ব্যাগও ছিল। তখন তার ভাই আল আমিন ভান্ডারি স্ত্রী ও ছেলেকে পাশের রুমে ঘুমানোর জন্য বলেন। ভোর চারটার দিকে আল আমিন ভান্ডারি তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিজের রুমে ভাত দিতে বলেন এবং সঙ্গে সেমাই রান্না করে নিয়ে আসতে বলেন। ভাত ও সেমাই খেয়ে আল আমিন ভান্ডারি রুমের দরজা লাগিয়ে হাফেজ মাস্টারকে নিয়ে আবার শুয়ে পড়েন। সকাল ৮টার দিকে নিহতের স্ত্রী দরজা খোলা দেখতে পেয়ে উকি মেরে দেখেন নিহতের রক্তাক্ত দেহ খাটের ওপর পড়ে রয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুনিকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। অপরদিকে, পরিবারের লোকজনের বরাত দিয়ে সদর নৌ থানা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাসা থেকে বাইরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় দুই শিশু। অভিভাবকরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাদের খুঁজে না পাওয়ায় তারা এলাকায় মাইকিং করে। শুক্রবার সকালে নদী তীরবর্তী ডোবায় দুটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা নৌ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশের ধারনা, দুই ভাইবোন নদীর তীরবর্তী ডোবার পাশে খেলতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে। তিনি আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুটি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।