অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এল পাসো সিটি মেয়র। কারণ প্রতিদিন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অপেক্ষায় দিন গুনছে। মেক্সিকো সীমান্তে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে তারা এ সীমান্ত শহরটিতে আগমনের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
ডেমোক্রেট মেয়র অস্কার লিসার বলেন, এই ঘোষণায় অভিবাসী সঙ্কট মোকাবেলায় শহরটিকে অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সম্পদ দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে মানুষের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা হবে। আমরা সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন ২ হাজার ৪০০-এর বেশি অভিবাসী এল পাসোতে প্রবেশ করে, যা তার আশ্রয় ক্ষমতার চেয়ে বেশি। যেমনভাবে তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, এতেও হাজার হাজার অভিবাসী এল পাসোর রাস্তায় ঘুমোচ্ছে।
ফেডারেল স্বাস্থ্য আদেশ টাইটেল ফোর্টি টু-র মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার। তার আগে এই জরুরি ঘোষণা এলো। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় প্রণীত টাইটেল ফোর্টি টু সীমান্তের ওপারে অভিবাসীদের দ্রুত ফিরে যাবার অনুমতি দেয়।
লিসার বলেন, আগামী সপ্তাহে যদি টাইটেল ফোর্টি টু আর কার্যকর না হয়, তবে কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন যে এল পাসো দিয়ে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের দৈনিক সংখ্যা ২ হাজার ৪০০ থেকে ৬ হাজারে বাড়তে পারে। এল পাসোর প্রতিনিধিত্বকারী ডেমোক্রেটিক সিনেটর সেসার জে ব্লাঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেছেন, সীমান্ত সম্প্রদায় ‘একটি অস্বাভাবিকরকম মানবিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য বিপুল সংখ্যক বিদেশি অভিবাসন প্রত্যাশী জড়ো হয়েছে টেক্সাসের এল পাসো সীমান্তে। এক হাজারের অধিক বিদেশি একযোগে উপস্থিত হয়েছে টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই সীমান্ত কেন্দ্রে, যা সাম্প্রতিককালে এক সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করতে প্রত্যাশী সবচেয়ে বড় গ্রুপ বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত রোববার তারা সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
এসব বিদেশির অধিকাংশই এসেছে নিকারাগুয়া থেকে। তারা ইউএস বর্ডার পেট্টল এজেন্টদের অনুরোধ জানাচ্ছে তাদেরকে এসাইলামের আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আগ্রহী এত অধিক সংখ্যক বিদেশি এর আগে কখনো এক সাথে ওই সীমান্ত ফটকে উপস্থিত হয়নি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব বিদেশি গত কয়েক দিনে ভিড় করেছে, যা হুট করে সামলানোর মতো অবস্থা ও সীমান্তে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের নেই। ফলে সঙ্গত কারণেই তাদেরকে এক সঙ্গীন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ সেখানে বছর জুড়ে প্রাত্যহিক ভিত্তিতে সীমিত সংখ্যক বিদেশির এসাইলাম আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন। এসাইলাম আবেদন করতে আগ্রহীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে একটি নন-প্রফিট সংস্থা এনানসিয়েশন হাউজ। এর ডাইরেক্টর রুবেন গর্সিয়া বলেন. ‘আগত মাইগ্রেন্ট সংখ্যা অধিক, তাদের তালিকাভূক্তি ও এসাইলাম আবেদন করতে ফেডারেল ইমিগ্রেশন অফিসাররা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। যারা রোববার সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, তাদের আবেদন প্রক্রিয়ার সোমবারেও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
বাসস্টেশনে পাশে এক অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন আলমারাজ সোসিডে ইসিদরো। তিনি বলেন, ঠিক এ মুহূর্তে পাঁচজন লোক আমার সঙ্গে আমার বাস্থানেই অবস্থান করছে এবং আরো তিনজনের শয়নের ব্যবস্থা করতে আমার ট্রাক খুলে দিয়েছি। এখন ঠান্ডার মওসুম। মাইগ্রেন্টদের খাবার বা গরম কাপড়চোপড় নেই। এ অবস্থার মধ্যেই তারা পড়ে আছে।’
ফেডারেল এজেন্সির হিসাব অনুযায়ী এল পাসো এলাকায় সাম্প্রতিককালে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই এলাকার সবগুলো ফটক দিয়ে অক্টোবর মাসে ৫৩ হাজার বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অন্য যেকোনো পয়েন্টের চেয়ে মাইগ্রেন্টের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে সবচেয়ে বেশি। পুরো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছে প্রায় ২৪ লাখ বিদেশি।
নিকারাগুয়া থেকে এসেছেন ড্যানিয়ে সালাজার ও তার পুত্র লুইস আলেকজান্ডার কালেরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গত রোববার মেক্সিকো হয়ে হুয়ারেজ পৌছেন। তারা বলেন যে তাদেরকে অপহরণ করে বেশ ক’দিন আটকে রাখা হয়েছিল এবং মুক্ত হওয়ার পর তারা বাসের বহরে একটি বাসে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌছেছেন। হোমল্যান্ড সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো এন মায়োরকাস গত সোমবার পরিস্থিতি দেখতে এল পাসো পরিদশন করেছেন।
সীমান্তে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময়ে নিষেধাজ্ঞার অনেকগুলোই বহাল রয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ নিকারাগুয়ার কাউকে বহিস্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারে না। কারণ মেক্সিকো তাদেরকে গ্রহণ করবে না এবং বাইডেন প্রশাসন তাদের নিকারাগুয়ায় ফেরত পাঠাতেও পারে না।
সেজন্য অধিকাংশ নিকারাগুয়ানকে আটকে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের সন্ধান পাওয়ার ট্রেকিং ডিভাইস দিয়ে অথবা ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটকে রেখে তাদের এসাইলাম আবেদনের সুযোগ দিয়ে ছেড়ে দিতে। এ প্রক্রিয়ায় তাদের মাত্র কয়েকদিন আটকে রাখা হয়। হয়তো শেষ পর্যায়ে তারা ইমিগ্রেশন কোর্ট কর্তৃক ডিপোর্টেশনের আদেশ লাভ করবেন। কিন্তু এর মধ্যে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক মাস বা বছরের পর বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।