দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু, দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু। রবী ঠাকুরের এই কবিতাটির পঙক্তি মালার মাঝে বাংলার প্রকৃতির সীমাহীন সৌন্দর্যের ছবি ফুটে উঠেছে । অনেকে বিদেশ ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তবে অনেকে হয়তো জানেন না যে নিজ দেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে । সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত আধ্যাতিক রাজধানী সিলেটের বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা মেঘালয়ের পাদদেশে লাল শাপলার রাজ্য ডিবির হাওর,প্রতিদিন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে হাজারো পর্যটকের চোখে। সিলেটের জৈন্তাপুরে উপজেলায় নিজপাট ইউনিয়নে অবস্থিত ৯০০ একর জলাভূমি জুড়ে বিস্তৃত শাপলা বিল ইতোমধ্যে মন কেড়েছে ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রেমিদের। প্রতিবছর অক্টোবর নভেম্বর মাসে হাজার হাজার পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠে হাওর পাড় । দীগন্ত প্রসারী প্রকৃতির এই অনাবিল সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা। ভোরের সূর্যালোকের আলোয় লাল শাপলার দৃশ্যপট যেনো স্বর্গীয় প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেয় চারপাশ। মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় পর্যটকের নয়নজুড়ে। সিলেট শহর থেকে ডিবির হাওরের দূরত্ব মাত্র ৪২ কিলোমিটার। ইয়াম, ডিবি, হরফকাটা, কেন্দ্রী বিল নামে এখানে মোট চারটি বিল রয়েছে। বর্ষাকালের পর বিলগুলো শাপলার রাজ্যে পরিণত হয়। তখন সমস্ত বিল জুড়ে হাজার হাজার লাল শাপলা ছড়িয়ে থাকে। ভোরে হাজারো লাল শাপলা ফুলের লালচে আভায় ঝলমল করে চারপাশ। প্রকৃতি যেন আপন ইচ্ছের মাধুরীতে লাল শাপলার হাসিতে বিলগুলোকে সাজিয়ে রেখেছে পরম মমতায়। যেকোনো ভ্রমণপিপাসুদের সারাজীবন মনে রাখার মতো একটি ভ্রমণ হতে পারে যেকারো। ডিবির হাওর শাপলা বিল নামেও সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া এখানে প্রায় দুইশত বছরের পুরাতন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির রয়েছে। কথিত আছে, জৈন্তা রাজ্যের কোন এক রাজাকে ডিবির হাওরে কোথাও পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। ধারণা করা হয় তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ মন্দির নির্মিত হয়েছে। এছাড়া হরফকাটা ও ডিবিরবিলের মধ্যস্থলে। রাজা রাম সিংহের সমাধি রয়েছে। শীতকালে এই হাওর জুড়ে অসংখ্য পরিযায়ী পাখিদের রাজত্ব শুরু হয়। তখন সাদাবক, জলময়ুরী ও পানকৌড়ি মাছরাঙা ডাহুক বালিহাঁস পাতিসরালি, ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলরবে মুখর হয়ে থাকে ডিবির হাওরের চারপাশ।সকালের একরূপ, বিকেলের অস্তমিত সূর্যের বিদায় বেলার রূপ পর্যটকের হৃদয়কে আন্দোলিত করে ।
যেভাবে আসবেন : দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস অথবা রেলে সিলেট শহরে এসে, সিলেট শহর থেকে সোবহানীঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে জৈন্তাপুরে যাবে, ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৯০ টাকা। জৈন্তাপুর বাজার থেকে ডিবির বিল বা শাপলা বিলে টমটম বা অটোরিকশায় যাওয়া যায় ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। অথবা সিলেট শহর থেকে লেগুনা,কার মাইক্রোবাস, অটোরিকশায় ভাড়া করে যাওয়া যাবে সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা । সেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশের টহল। সিলেটে এখন কড়া রোদ ডিবির হাওরে যাবার সময় সঙ্গে ছাতা নিতে পারলে ভাল হয়। সেখানে কড়া রোদ্দুরে কোথায়ও দুদন্ড দাঁড়াবার ছায়া নেই। বিলে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর বাহন পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থাও রয়েছে।এই নভেম্বরে ঘুরে আসতে পারেন সপরিবারে শাপলা বিলের মোহনীয় সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে আপনাকে।