দফায় দফায় বন্যা আর অবিরাম বৃষ্টির ফলে এবছর রংপুর অঞ্চলে আলু চাষে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। প্রতি বছর আলু চাষে কৃষি বিভাগের যে লক্ষ্য মাত্রা থাকে সেই লক্ষ্যমাত্রা এবার পুরণ না হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে এ বছরের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির ধকল সামনে নিতে হচ্ছে কৃষি বিভাগকে। সব কিছু ছাপিয়ে লক্ষ্যপুরণে সর্বাত্মক চেষ্টায় এখন কৃষি বিভাগ। তবে বছর শেষে সংকট মোকাবেলায় আগাম কার্যকর প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, গেল (২০১৯-২০) অর্থ বছরে এ অঞ্চলে আগাম আলু চাষ হয়েছিলো ১২ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত মাত্র ৯৮৯ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে। যা পাঁচ দফা বন্যার পর ফের গত তিনদিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির প্রভাব বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ। রংপুর আবহাওয়া অধিদফতরের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, চলতি মাসের ১৮ ও ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রংপুর অঞ্চলে। ফলে বৈরী আবহাওয়ায় কাঁদা ও ভেজামাটিতে আলু চাষে বিঘ্নিত হবে। নতুন করে আলু চাষের জন্য জমি উপযোগি করতে তুলতে অনেক কাঠখোড় পোহাতে হবে আলু চাষিদের। জানা গেছে, গত (২০১৯-২০) মৌসুমে আগাম আলু চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় ৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর এবং রংপুর জেলায় দুই হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর আবাদ হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ দফা বন্যার কারণে এবার আলু চাষ ব্যাহত হয়। চলতি (২০২০-২১) মৌসুমের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট আলু চাষ হয়েছে মাত্র ৯৮৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় আলুর আবাদ হয়েছে ৯৮১ হেক্টর এবং রংপুরে আবাদ হয়েছে ৮ হেক্টর। সরেজমিন দেখা গেছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে দেরিতে হলেও রংপুর অঞ্চলের আগাম আলু চাষিরা বীজ রোপণ এবং জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আরো দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আগাম আলু চাষের কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। কৃষকরা জানিয়েছেন, এই মাসজুড়ে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। কিন্তু বন্যার কারণে বেশির ভাগ আলুচাষি নির্দিষ্ট সময়ে কয়েকবার জমি পরিচর্যা করেও বীজ রোপণ করতে পারেননি। যারা করেছেন তা-ও আবার পানিতে ভেসে গেছে। নীলফামারীর জলঢাকার আগাম আলুচাষি খাজুর আলী জান ান, আমার ৫ একর জমিতে আগাম আলু চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম, বন্যার কারণে তা রোপণ করা হয়নি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কৃষক এনামুল হক জানান, কয়েকবার জমি ঠিক করেও বন্যা ও বৃষ্টির কারণে আগাম আলু রোপণ করতে পারিনি। এ বছর ২ বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আলু বীজের (৮৫ কেজি) প্রতি বস্তা কিনতে তার খরচ হয়েছে এক হাজার ৮০০ টাকা। একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বন্যার কারণে আলুর আবাদের সমস্যা না হলে আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে বাজারে আগাম আলু পাওয়া যেত। ভাল দাম পাওয়ার জন্য কেউ কেউ ৪৫ থেকে ৫০ দিনের আগে আলু উত্তোলন করলেও মূলত আগাম আলু ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর বাজারে আসে। এই আলু শুরুতে ১শ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও নিয়মিত আলু আসার আগ পর্যন্ত আগাম আলুর কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাই ভাল দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলে আগাম আলুর জমি প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগাম আলু হিসেবে জনপ্রিয় জাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে, আলু-৭,গ্রানুলা এবং ষাইটা। পীরগাছা উপজেলার দেউতি গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, এ বছর ৩ বিঘা (২৭ শতকে ১ বিঘা) জমিতে আগাম আলু আবাদ করার কথা ছিলো তার। এমনকি বন্যার কারণে তার রোপণকৃত কিছু জমির আলু নষ্ট হয়েছে। তাই পানি নেমে যাওয়ায় পুনরায় আলুর আবাদ নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। গত বছর ৩ বিঘা জমিতে স্থানীয় জাত (সাদা আলু) আবাদ করেছিলেন। এতে বিঘা প্রতি ৮৫ কেজির ২ বস্তা আলুর বীজ লেগেছিলো। বিঘা প্রতি আলুর ফলন হয়েছিলো গড়ে ৬ বস্তা করে। কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলেন, আমরা বিভিন্ন এলঅকায় ছুটে চলেছি। জমির পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে গেলেও মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকায় কৃষকরা আলু চাষ করতে পারছেন না। তার উপর ফের চার দিন ধরে গুড়ি গৃড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে পানি না জমলে আশা করা হচ্ছে আগামী ৩০ অক্টোবরের পরেই ব্যাপকহারে জমিতে আলুর আবাদ হবে। রংপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রংপুর আঞ্চলিক অফিসের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মনিরুজ্জামান জানান, এবছর অতি বন্যার কারণে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা সেই সংকট কাটিতে উঠতে সব ধরণের চেষ্টা করছি। যাতে করে আলু উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ করতে পারি। এজন্য কৃষকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। রংপুর চেম্বার অফ কমার্স এর প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, প্রাকৃতির দুর্যোগ থাকবেই। এই দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সে কারণে নিতে হবে আগাম প্রস্তুতি। আমার প্রস্তুতি নিলে সংকট সমাধান করতে সহজ হবে।