সিলেট ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। সেই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা। এতে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব নদনদীর পানি কমছে। তবে ছাতক, সুনামগঞ্জ ও দিরাই উপজেলায় সুরমা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে এ দুই জেলায় এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল। অন্যদিকে উজানের ঢল ও বৃষ্টির প্রভাবে দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ কুড়িগ্রাম জেলার সব কটি নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। নেত্রকোনার উব্ধাখালী, সোমেশ্বেরী, কংস ও ধনু নদীর পানিও বাড়ছে। দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার প্রায় ২০ গ্রামে পানিবন্দি ৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সিলেট অফিস ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত সাত দিনের টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সব কটি নদীর পানি বেড়ে ৯টি উপজেলা প্লাবিত হয়। বসতঘরেও পানি ওঠে। রাস্তাঘাট ও সবজিখেত ডুবে যায়। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নদনদীর পানি কমেছে। তলিয়ে যাওয়া ৯৯৯ হেক্টর আউশ জমি থেকে পানি নামতে শুরু করায় চাষিরা আশার আলো দেখছেন। সিলেট কৃষি বিভাগ জানায়, দ্রুত পানি কমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ছাতকে পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার এবং দিরাইয়ে ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পানি হ্রাস পেয়ে ১১ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানের জলাবদ্ধতা কটেনি গত সাত দিনেও। দুর্ভোগে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দরা। সিলেট ওসামানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নিতে নাগরিক সমাজ দাবি জানিয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি খাল উদ্ধারে আদালতের রায় বাস্তবায়নের দাবিতে মঙ্গলবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মানববন্ধনে আবু তাহের মিয়া সভাপতিত্ব করেন। এদিকে প্রায় ৪৪ ঘণ্টা পর নিখোঁজ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রবিবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে বেড়াতে গিয়ে পানির স্রোতে নিখোঁজ হন আব্দুস সালাম (২৩)। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ধলাই নদের উৎসমুখে লাশটি ভেসে ওঠে। শাল্লা (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা উজানের পানি নদনদীর বিপৎসীমা অতিক্রম করে হাওরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় কিছু নতুন গ্রামের বাড়িতে পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেকেই ধান, চাল, গবাদিপশু ও আসবাবপত্র সুরক্ষিত স্থানে রাখতে শুরু করেছেন। তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তাহিরপুরসহ দোয়ারাবাজার, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও বাড়ির আঙিনা এবং কিছু ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজসহ জেলার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে গৃহপালিত প্রাণীসহ আশ্রয় নেওয়া ৩৭টি পরিবারের কেউই এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকারি সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার বিকেলে দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছে নদনদী অববাহিকার মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এখন পর্যন্ত বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙনে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে শতাধিক বিঘা আবাদি জমি, অর্ধশত বাড়িঘর এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে আরো দেড় শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও ভাঙনকবলিত মানুষ বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে। ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ফুলবাড়ীর চর গোরকমণ্ডল এলাকায় ধরলার ভাঙনে শতশত ফসলি জমি, ১০টি পরিবার ও হাফ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক গত দুই সপ্তাহে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোনার দুর্গাপুর এবং কলমাকান্দা উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাজনিত কারণে প্রায় ৫ হাজার লোক পানিবন্দি রয়েছে। কলমাকান্দায় উব্ধাখালী নদীর পানি গত মঙ্গলবার বিকালে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, জারিয়ার কাছে কংস এবং খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি এখানো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কলমাকান্দায় উঁচু এলাকার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ফের বাড়ছে দুধকুমার ও গঙ্গাধরের পানি। এতে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরবর্তী মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।