ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রসের ঐতিহ্য, পুষ্টি গুণে ভরা এ রসের জন্য একসময় শীতের সকালে অপেক্ষায় থাকতো কখন গাছিয়া খেজুরের রস নিয়ে আসবে। আজ সেই দিন সেই ঐতিহ্য এখন আর সচরাচরও চোখে পড়েনা, চোখে পড়েনা রসের হাড়ি, কলসি আর খেজুর গাছ থেকে রস বের করার সরঞ্জাম ও গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। শীতের সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিদের পাড়া মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাকের শব্দ ও শোনা যায় না। কিš‘ এক সময় শীতের মওসুম শুরু হতেই বিভিন্ন বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে চলতো হরেক রকমের মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। এখন আর গ্রামবাংলায় এ দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে যেমন, নতুন চারা রোপণ না করা, মাটির উর্বরতা ও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা ও খেজুর গাছের প্রতি মানুষের তেমন আগ্রহ না থাকায় দিনে দিনে বিলীন হয়ে পড়েছে খেজুর গাছ। রসের এ খেজুর গাছকে কেউ কোন গুরুত্বও মনে করছে না। সুস্বাদু ও পিঠাপুলির জন্য অতিপ্রয়োজনীয় উপকরণ হওয়ায় এখনো খেজুরের রসের চাহিদা রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে এ রসের সন্ধান পাওয়া যায়, পেলেও আগের চেয়ে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। কিš‘ আগের মতো রস ও গুড় পাওয়া যায় না, যা পাওয়া যায় তাও ভেজালে ভরা। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তির তা বলে শেষ করা যাবে না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েস তো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মওসুমে গ্রামে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। হযরতপুর ইউনিয়নের বাটারাকান্দি গ্রামের গাছি মো. আবুল মিয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, এখন তো খেজুরের রস পাওয়া খুব কঠিন। এখন সে রকম গাছও নেই, তেমন রসও নেই। এক সময় কাঁচা খেজুরের রসের পায়েস খাওয়ার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারিনা। আমাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-পুতিরা আর সেই রস, রসের পায়েস ও পিঠাপুলি চোখেও দেখতে পায়না। তবে এ পেশায় এখনো আমি লেগে আছি বিধায় মাঝে-মধ্যে কিছু রস বাড়িতে নিয়ে আসি, তাতে তারা খুবই খুশি হয়। আর যা কয়টা গাছ আছে তাতে রসও খুব কম আসে। এ রসের চাহিদা থাকায় এবং দামও ভাল থাকায় অনেক সময় সবটুকুই বিক্রি করে দেই। লংকারচরের মো. সুমন মিয়া বলেন, এখন গাছের সংখ্যা অনেক কম, রসও কম, গাছিও নেই তেমন। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই। তবুও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগে এই কাজ করে ভাল উপার্জন হতো সংসারও চলতো ভাল। এ খেজুরের রস আহরণে এবং বিক্রিতে আনন্দ ও পেতাম।
###