বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)-এর যৌথ আয়োজনে “স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা” শীর্ষক কর্মশালা গত রবিবার (১০ মার্চ, ২০২৪) সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় মাল্টিপারপাস হল, বিনিয়োগ ভবন, আগারগাঁও, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ আব্দুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং শ্রীম্প হ্যাচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট জনাব আশেক উল্লাহ রফিক এমপি ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোহাং সেলিম উদ্দিন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব লোকমান হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট বিডার নির্বাহী সদস্য জনাব অভিজিৎ চৌধুরী। বিএফএফইএ-এর প্রেসিডেন্ট জনাব কাজী বেলায়েত হোসেন, মৎস্য খাতের সমস্যাসমূহ ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো বিস্তারিত বক্তব্যে উপস্থাপন করেন। বিডা-এর মহাপরিচালক জনাব মোঃ আরিফুল হক অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব ও বিপিসি-এর সিইও জনাব নাহিদ আফরোজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিচার্স এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভলপমেন্ট (র্যাপিড)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ-এর প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন, এম. ইউ সী ফুডস লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শ্যামল দাস, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ডঃ মোস্তফা আবিদ খান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মনমনসিংহ মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডীন জনাব ডঃ এ. কে. এম নওশাদ আলম ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর। কর্মশালায় বিএফএফইএ-এর প্রেসিডেন্ট জনাব কাজী বেলায়েত হোসেন স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবসমূহের মধ্যে তিনি হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যাংক ও সকল প্রকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে সকল প্রকার ঋণের বিপরীতে সুদের হার স্মার্ট সুদ ৭.১০% ধার্যকরণ, এখাতে শিল্প কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহের জন্য ২% হারে উৎসে কর প্রত্যাহারকরণ, রপ্তানি বিল হতে ১% অগ্রিম ট্যাক্স-এর স্থলে ০.২৫% নির্ধারণ, হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার উপর ১০% অগ্রিম আয়কর কর্তন রহিতকরণ, চিংড়ি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকরণ, কারখানায় কাঁচামাল (চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ) সংকট নিরসণকল্পে ইড়হফবফ ডধৎবযড়ঁংব সুবিধা ও হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতকে কৃষি খাতের ন্যায় যাবতীয় সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ আব্দুর রহমান এমপি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে এদেশ সকল ক্ষেত্রেই উন্নত হবে ইনশাআল্লাহ্। তিনি মৎস্য খাত হতে আগামী ৫ বছরে রপ্তানি আয়ের ১৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তা বাস্তবায়ন শেখ হাসিনার নেতৃতেই হবে। দেশে চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা দ্বারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সকলকে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বাংলাদেশ তার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তিনি স্বল্পোনত দেশ হতে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে মৎস্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, “ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে সুচিত সুনীল অর্থনীতি বিকাশে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ, উন্নয়ন, স্থিতিশীল উৎপাদন ও সর্বোচ্চ আহরণ নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রণয়ন করে আবশ্যক। তিনি আরও বলেন, “নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের জোগানের মাধ্যমে সুস্থ ও মেধাবী মানবসম্পদ তৈরি, দারিদ্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মূল্যবান অবদান রেখে চলেছে মৎস্য খাত। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১২ শতাংশেরও অধিক লোক এ খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং সরকারের যথোপযুক্ত সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও টেকসই উৎপাদন নীতির পাশাপাশি নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষী ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, বাগদা, গলদাসহ ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে এ খাতকে এগিয়ে নেয়া হবে। বিশেষ অতিথি কক্সবাজার-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং শ্রীম্প হ্যাচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট জনাব আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, চিংড়ি খাতের উন্নয়নে বিদেশ হতে গ্রীণ ফান্ড ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়াও ভরাট খালগুলো খনন করে পানির প্রবাহ সচল রাখার এবং মহেশখালী এলাকায় জেগে ওঠা চরগুলো চিংড়ি চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব করেন। তিনি আরও বলেন, ব্লু ইকনোমি এবং চাষীদের চিংড়ির এসপিএফ পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, হতাশা নয় বাংলাদেশ একটি স্বপ্নের নাম। তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম অর্থনৈতিক দেশ। এদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে ২য় স্থান অর্জন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পোশাক খাতের ন্যায় পাট, চামড়া ও মৎস্য খাতকেও এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সহযোগিতা করা হবে। তিনি আরও বলেন, মৎস্য খাতের উন্নয়নে উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারীর মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করতে হবে। বিডা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এখাতের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করা হবে। পরিশেষে তিনি বলেন, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।