দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যত জল্পনা কল্পনার অবসান। সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে সীমান্তবর্তী একটি নিম্নাঞ্চল জেলা। শিক্ষা দীক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও খণিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পের নতুন দিগন্ত নিয়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভর জেলা হিসেবে আবির্ভাবে সুখ্যাতি অর্জন করে চলেছে এই অবহেলিত জেলাটি। ৫ টি নির্বাচনী আসন নিয়ে গঠিত এই জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুনামগঞ্জ -১ সংসদীয় আসন। এই আসনের এম,পিকে বলা হয় আলাদিন। আর চেরাগ হলো সুনামগঞ্জ -১ আসন। খণিজ সম্পদ চুনাপাথর, কয়লা ও নুড়ি মিশ্রিত বালুর কারণে টাকার ক্ষণীও বলা হয়ে থাকে এই আসন এটিকে । জনশ্রুতি রয়েছে টাকার জোরে গত তিনটি নির্বাচনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন হেভিওয়েট প্রার্থীদের পেছনে ফেলে নৌকার মনোনয়ন ভাগিয়ে নিয়েছিলেন। করেছিলেন বাজিমাত। এবার বাজিমাত করলেন সিলেট মহানগর আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট আইনজীবী সমিতির সদস্য এ্যাড. রনজিত চন্দ্র সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা সদরে আ.লীগের শক্তিশালী নেতাদের পেছনে ফেলে সুনামগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে ড. মোহাম্মদ সাদিক নৌকার হাল ধরার জন্য মনোনীত হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় পার্টির দখলে থাকা এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া আ.লীগ। সুনামগঞ্জ-৫ ও সুনামগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনে মুহিবুর রহমান মানিক ও এম,এ মান্নান (দ্বি-রত্ন) মামু-ভাগ্নাকে কেউ ভাগাতে পারেননি। তাদের বেলায় যেনো মামু-ভাগ্না যেখানে আপদ নাই সেখানে বিখ্যাত এই প্রবাদ বাক্যটি অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। সুনামগঞ্জ -২ দিরাই-শাল্লা সংসদীয় আসনে প্রয়াত পার্লামেন্টারিয়ান ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী ড. জয়া সেন গুপ্তকে হটিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ @ আল আমীন চৌধুরীকে নৌকা কান্ডারী হিসেবে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর আসনটি ঘিরে এখনো রয়েছে নানাভাবে জল্পনা কল্পনা। কারণ গত নির্বাচনেও নৌকার মনোনয়ন ভাগিয়ে নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার এম,এনামুল কবীর। কিন্তু পরবর্তীতে যৌথ সরকার গঠন পক্রিয়ায় তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে কি-না সে দিকেই সবার শেষ দৃষ্টি। সুনামগঞ্জ সদর আসনকে ঘিরে ব্যাপক কৌতুহল এর পেছনে রয়েছে নানাবিধ রহস্য। এম,এ মান্নান কোন রাজনীতিবিদ না হওয়ার পরও প্রয়াত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ এঁর উত্তরসূরী আজিজুস সামাদ ডনকে পরাজিত করে সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ (বর্তমানে শান্তিগঞ্জ) ও জগন্নাথপুর) সংসদীয় আসনে এম,পি নির্বাচিত হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরকে অবজ্ঞা করে বড় বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছেন দক্ষিণমুখী। সদরে আ.লীগের দাপট থাকলেও এম,পি না থাকায় জেলাকে সম্প্রসারণের ধোঁয়া তুলে নিজের উগারেই ধান তুলতে ছিলেন ব্যতি ব্যস্থ। সুনামগঞ্জ -৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ সাধ্যমত চেষ্টা করেও শুধুমাত্র জাতীয় পার্টির এম,পি হওয়ায় আটকাতে পারেননি দক্ষিণী পরিকল্পনা। তাই সুনামগঞ্জের তৃণমূল মানুষের বিশ্বাস ড. মোহাম্মদ সাদিক এম,পি হলে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। তখন আর নিজের উগারে একচেটিয়া ধান তুলতে পারবেন না এম,এ মান্নান। কারণ ড. মোহাম্মদ সাদিক এম,পি হলেই মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অনেকাংশেই এগিয়ে থাকবেন- এমন ধারণা পোষণ করছেন নির্বাচনী এলাকার অধিকাংশ জনগণ।