প্রাকৃতির সৌন্দয্যের লীলাভূমি শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে অবস্থিত গজনী অবকাশ কেন্দ্র এখন পর্যটনে মুখরিত। প্রতিদিন শেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে ভিড় করছেন। নিচ্ছেন সৌন্দয্যের পরশ। সারি সারি গাছ। যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। সবুজ রঙের আভা ছড়িয়ে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওয়াটার পার্ক, ভাসমান সেতু, প্যারাট্রবা, জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রিজ, কেবলকারসহ বেশ কয়েকটি রাইড চালু হওয়ায় এক নান্দনিক রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা গারো পাহাড়খ্যাত ‘গজনী অবকাশ’ পর্যটন কেন্দ্র। চোখজুড়ানো সৌন্দর্যে পর্যটন কেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে এক টুকরো স্বর্গরাজ্যে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গজনীর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। শাল, গজারি, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, সমতল ভূমির সবুজের সমারোহ তাদের হাতছানি দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের। সবুজে মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। প্রতি বছরের শুরু থেকেই প্রতিদিনই পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে আসেন অগণিত পর্যটক।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ পর্যটন কেন্দ্র মুখর থাকে বিভিন্ন বয়সের পর্যটকে। পর্যটকের এমন উপস্থিতিতে দারুণ খুশি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, ১৯৯৩ সালে শেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদারের উদ্যোগে এ অবকাশ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। আর এখন তো শেরপুর মানেই ‘গজনী অবকাশ’ পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখানে। সে হিসেবেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে এ অবকাশ কেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ’। সেই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে ‘ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ জাদুঘর। এখানে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াক ওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত ‘আলোকের ঝরনাধারা’। এ পর্যটন কেন্দ্রের উত্তর পাশে অবস্থিত ‘গারো মা ভিলেজ’ও (অমৃতলোক) সেজেছে নতুন করে। এখানে মাশরুম ছাতার নিচে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধানের জমি এবং পাহাড়ি জনপদের জীবনধারা উপভোগ করা যায়। শিশুদের বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ভাস্কর্য। আছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু কর্নার। গারো পাহাড়ের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’। ওই টাওয়ারে উঠে উত্তরে তাকালে চোখে পড়বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সবুজে ঢাকা পাহাড়।‘গজনী অবকাশ’ কেন্দ্রে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য রয়েছে শতাধিক দোকান।
‘গজনী অবকাশ’ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা সফরে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ বেড়াতে ও বনভোজনে করতে এসেছেন। তারা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছেন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। স্মৃতি ধরে রাখতে স্বজন, বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে তুলছেন ছবি ও সেলফি। ময়মনসিংহ থেকে আসা রুবেল হাসান বলেন, এর আগেও এখানে এসেছি। তবে এবার নতুন স্থাপনায় ও সবুজে পর্যটন কেন্দ্রটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। এখানকার কাপড়ের দোকানের মালিক মোতালেব বলেন, এবার মৌসুমে অনেক পর্যটক আসতেছে এখানে। আমাদের বেচাকেনাও অনেক ভালো। এরকম চলতে থাকলে ভালোই লাভবান হবেন জানান এ ব্যবসায়ী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, গজনী অবকাশে দর্শনার্থী বেড়েছে।
এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় নিরাপত্তারও কোনো সমস্যা নেই। এ ছাড়া আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে তার জন্য ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও অবকাশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি সাহেলা আক্তার বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য ‘গজনী অবকাশ’ কেন্দ্রের উন্নয়নকাজ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে এ পর্যটন কেন্দ্রের অদূরে হোটেলসহ রিসোর্ট নির্মাণ করা হবে।