ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের বারোয়ারী মন্দিরের কালী প্রতিমায় আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধদের হামলায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরো পাঁচ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার পর ৬ ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ রাখা হতাহতদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার জানান, হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের ওই বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মুসলিম সাত শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে গণ ধোলাই দেয়। খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনা স্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সহযোগিতায় ছয় ঘন্টা পর অবরুদ্ধদের উদ্ধার করা হয়।। তিনি জানান, আহত অবস্থায় সাত শ্রমিককে উদ্ধার করা হলেও তাদের মধ্যে চারজন অচেতন রয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে দুইজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মোরশেদ আলম জানান, শত শত মানুষ এই হামলায় অংশ নেয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষন করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইট পাটকেল এর আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হলেও ঠিক কতজন সদস্য আহত হয়েছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি। পুলিশ সুপার জানান এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান পুলিশ সুপার। আহত শ্রমিক লিটন মোল্লা জানান, আগুন দেখার পর এলাকাবাসীর সাথে নেভানোর কাজে অংশ নেয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা ওই শ্রমিকদের সন্দেহ করে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বিক্ষুব্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষ লাঠি রড ইট দিয়ে হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এদিকে আহত শ্রমিকদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হয় রাত দুইটার দিকে। নিহতারা আপন দুই ভাই। এই মো. আশরাফুল খান (২১) ও মোঃ আরশাদুল খান (১৫)। নিহতরা ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খান এর পুত্র।