নতুন আমন ধান কাটা শুরু হলেও ধানের জেলা দিনাজপুরে বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা। হঠাৎ চালের দাম বাড়ার ব্যাপারে চাল বিক্রেতারা দুষছেন মিল মালিকদের। আর মিল মালিকেরা বলছেন, মিলগেটে নতুন চালের দাম বেশি থাকলেও বাড়েনি পুরোনো চালের দাম। দিনাজপুর শহরের প্রধান চালের মোকাম বাহাদুর বাজারে বৃহস্পতিবার দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তার দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর প্রকারভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা জাতের হাইব্রিড চাল ৫০ কেজির বস্তায় ২০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২১০০ টাকা, গুটি স্বর্ণা চাল ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০০ টাকায়, সুমন স্বর্ণা চাল ২৫০০ থেকে বেড়ে ২৬৫০ টাকা, বিআর-১৯ জাতের চাল ২৫৫০ থেকে বেড়ে ২৭৫০ টাকা, বিআর-২৮ জাতের চাল ২৭০০ থেকে বেড়ে ২৮৫০ টাকা এবং প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চাল ৩২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাহাদুর বাজারের চাল বিক্রেতা লিয়াকত আলী জানান, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু থাকার কারণে বাজারে চালের বিক্রি কমেছে। এর পরও মিলের মালিকরা হঠাৎ চালের দাম বাড়িয়েছে। ফলে মিলের মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন জানান, নতুন আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করেছে। দাম বেশি। বেশি দামে নতুন ধান কিনে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তবে তিনি জানান, পুরাতন অর্থাৎ গত বোরো মৌসুমের চালের দাম বাড়েনি। এসব চাল আগের দামেই বিক্রি করছেন মিলের মালিকেরা। এদিকে বাজারে নতুন আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। এর পরও চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চাল ক্রেতারা। বাহাদুর বাজারে চাল কিনতে আসা মো. আমির হোসেন জানান, তিনি গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল কিনেছেন ৬৮ টাকা কেজি দরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাজারে এসে সেই একই মিনিকেট চাল তিনি কিনেছেন ৭২ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে বাজারে চালের দাম বাড়ায় ভিড় বেড়েছে খোলা বাজারে সরকারি ওএমএস চাল বিক্রির কেন্দ্রগুলোতে। দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়ী মহল্লার মহারাজার মোড়ে খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারে চাল বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাতে ব্যাগ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। ঐ কেন্দ্রে ডিলার মো. লতিফুল ইসলাম জানান, ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে চাল দিতে পারছেন না তিনি। এ জন্য চাল না পেয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন জানান, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার ধারণা, চালের মূল্য খুব একটা বাড়বে না। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ৮ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। নতুন ধান উঠলেই চালের দাম কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, জেলায় ৪৮টি ডিলারের মাধ্যমে ৪৮ মেট্রিক টন চাল ও ৪৮ মেট্রিক টন আটা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। দিনাজপুর পৌর এলাকায় ১২ জন ডিলার এবং বাকি ১৩টি উপজেলায় ৩৬ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাল ও গম সরকারি মূল্যে বিক্রি করছেন।