মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারাদেশে কয়েক দফায় সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি টিকা কূটনীতিতে নতুন করে তৎপর শুরু করেছে। বিশেষ করে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বড়ে যাওয়া ও ভারত থেকে টিকা আসতে দেরি হওয়াতেই বিকল্প পথ খুঁজছে সরকার।
এরই মধ্যে চীনের উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকা আনার কথা অতি সম্প্রতি জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও টিকা আনার বিষয়ে কথা হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি টিকা বাংলাদেশের পাওয়ার কথা। তবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পেয়েছে চুক্তির ৭০ লাখ টিকা। দুই দেশের সরকারের মধ্যস্থতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো এ টিকা আনছে। তবে ভারতেই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদা বেড়েছে। সেই অনুযায়ী সরবরাহ কম। আর তাই ভারত থেকে টিকা পেতে বিঘ্ন হচ্ছে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বাংলাদেশেও টিকা জরুরি হয়ে পড়েছে। ভারত থেকে টিকা আসতে দেরি হওয়ায় বাংলাদেশ বিকল্প দেশের দিকে ঝুঁকছে। চীন-রাশিয়া, গ্যাভি-কোভ্যাক্সের সঙ্গে টিকা আনতে ব্যাপক তৎপরতা চলছে।
রাশিয়ার সঙ্গে টিকা আনার বিষয়টি এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে সরকার। টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে সমঝোতা চুক্তিও সই হয়েছে। এখন রাশিয়া- বাংলাদেশ যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে যাবে। বাংলাদেশেরই কোনো একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি রাশিয়ার প্রযুক্তি নিয়ে টিকা উৎপাদন করবে। তবে সেই কোম্পানিকে টিকার ফর্মুলা গোপন রাখতে হবে। এছাড়া রাশিয়া থেকে স্পুটনিক-৫ টিকা আমদানির বিষয়েও সরকার তৎপর।
চীনের সিনোভ্যাক টিকা আনার বিষয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে টিকা পেতে বাংলাদেশকে আগামী জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জুনের পর বাংলাদেশকে ৫ থেকে ৬ লাখ টিকা উপহার দেবে চীন।
এদিকে টিকার জন্য চীনের নেতৃত্বে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। ছয়টি দেশের এই প্ল্যাটফর্মের নাম দেয়া হয়েছে ‘এমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড ফর সাউথ এশিয়া’। টিকার জন্য এ প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্ল্যাটফর্মে দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকাও রয়েছে।
এছাড়া টিকা সরবরাহের লক্ষ্যে বৈশ্বিক জোট গ্যাভি-কোভ্যাক্সের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। গ্যাভি-কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে আগামী মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ১ কোটি ৯ লাখ টিকা পাওয়ার কথা। এছাড়াও ফাইজারের টিকা আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
এদিকে ভারতের টিকার বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত বাকি কোভিড ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।