করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ পরিবার এবং চলতি এপ্রিল মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষতি হওয়া ফসলের জন্য ১ লাখ কৃষকদের মাঝে ৯৩০ কোটি টাকা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঈদের আগেই এই অর্থ জি টু পি পদ্ধতিতে সরাসরি সুবিধাভোগীদের হাতে পৌঁছানো হবে। এর মধ্যে ৮৮০ কোটি টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এবং ৫০ কোটি টাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পাবেন।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে সবকিছু চূড়ান্ত করেছে। এর আগে এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছর নানা ধরনের তথ্য বিভ্রান্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের হাতেই সহায়তার অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সে সময় অর্থ বিভাগ উদ্যোগ নিয়ে সব ধরনের ভুল দূর করে একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছিল। তার ভিত্তিতেই তালিকাভুক্তদের হাতে সহায়তার অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শেয়ায় নিয়োজিত নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া প্রসঙ্গে সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে অর্থ বিভাগ একটি প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মুজিববর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। বর্তমানে করোনা ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব/বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করার ফলে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১২৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কর্মসূচির আওতায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের জি টু পি পদ্ধতিতে নগদ আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের ১২ মে উদ্বোধন করেন। কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের/স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক সংগৃহীত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিাকা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএএমপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করে ৩টি পর্বে অর্থ বিভাগে মোট ৪৯,৩০,১৪৫ জনের তালিকা পাঠায়। আইসিটি বিভাগ থেকে তথ্য পাওয়ার পর প্রাপ্ত তথ্যের সঠিকতা যাচাই-এর উদ্দেশ্যে অর্থ বিভাগে সংরক্ষিত বিভিন্ন তথ্য ভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মোবাইল নিবন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-এর সাহায্য নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরবর্তীতে বহুমুখী যাচাইয়ের ফলে অন্য সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত, বিভিন্ন পেশা উল্লেখ, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের, মালিক, সরকারের পেনশনভোগী, একই ব্যক্তির তথ্য একাধিকবার অন্তর্ভুক্তি, একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/ভুল রাউটিং নম্বর ইত্যাদি অসঙ্গতি থাকায় ১৪,৩২,৮০১ জনকে তালিকা থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে যোগ্য বিবেচিত ৩৪,৯৭,৩৫৩ জনের অনুকূলে মাথাপিছু ২৫০০ টাকা হারে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি)-এর মাধ্যমে মোট ৮৭৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। করোনাভাইরাসের কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের যাচাই-বাছাই করা তালিকা অর্থ বিভাগের ডাটাবেজে সংরক্ষিত আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৪ এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, গৃহকর্মী, মটরশ্রমিকসহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিতদের আবার নগদ আর্থিক সহায়তা (জনপ্রতি ২,৫০০ টাকা দেওয়ার জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অর্থ বিভাগের অধীন ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা তহবিল’-এ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করা হবে। এর আগের অভিজ্ঞতার আলোকে অর্থ বিভাগের ডাটাবেজে সংরক্ষিত তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের সরাসরি এবং অতি অল্পসময়ে আর্থিক সহায়তার অর্থ পৌঁছে দেওয়া যাবে।
এছাড়া, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ এপ্রিল সংঘটিত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬ টি জেলার ৩০,৯৪,২৪৯ হেক্টর জসলি জমির মধ্যে ১০,৩০১ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৫৯,৩২৬ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে ১ লাখ কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা (নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বরসহ) তৈরি করছে। করোনাভাইরাসের কারণ কর্মহীন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের জনপ্রতি ৫,০০০ টাকা হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।