সেই হুই-হুল্লোড়। বাংলাদেশ-বাংলাদেশ চিৎকার। গোলের পর আনন্দ, উচ্ছ্বাস। এক দিকে লাল-সবুজের পতাকা উড়ছিল খোলা আকাশে, আরেকদিকে জামাল ভূঁইয়া, মাহবুবুর রহমান সুফিলদের পরমানন্দ, মহোল্লাস।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা হয়ে উঠল উৎসবের মঞ্চ। পুরো ৯০ মিনিট দাপটের সঙ্গে খেলে নেপালের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ে রাঙাল বংলাদেশ। ২-০ গোলে জয় পেয়েছে জেমি ডের শিষ্যরা। দলের হয়ে একটি করে গোল করেন মোহাম্মদ নাবিব নেওয়াজ জীবন ও মাহবুবুর রহমান সুফিল।
কী ছিল না বাংলাদেশের জয়ের মঞ্চে। নিখুঁত পাস, ধ্রুপদী ড্রিবলিং, দুর্দান্ত ফিনিশিং ও জমাট রক্ষণের দলীয় পারফরম্যান্সে স্বাগতিকরা ছিল অনন্য, অসাধারণ, অভূতপূর্ব। দীর্ঘ দশ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে বাংলাদেশ অন্তত বুঝিয়ে দিয়েছে, জং ধরেনি শরীরে।
শুরুর দশ মিনিট ও শেষ দশ মিনিটের খেলাটাকে আলাদা রাখুন। বাকিটা সময়ের পারফরম্যান্স চোখে লেগে থাকার কথা। প্রথম গোলটা করেছিলেন জীবন। মধ্যমাঠ থেকে তার বাড়ানো বল যায় সাদের পায়ে। প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারে খানিকটা ভুগিয়ে বল নিয়ে ভেতরে ঢুকেন সাদ। এরপর গোলমুখে ক্রস। নিচু হয়ে আসা বলে জীবনের ডানপায়ের আঁটসাঁট ফিনিশিং। উল্লাসে ফেঁটে পড়ে বঙ্গবন্ধুর গ্যালারি। পাশেই ছিলেন অভিষিক্ত সুমন রেজা। জীবন যদি নাও থাকতেন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক লিম্বুকে ফাঁকি দেওয়া যেত সহজেই।
মিনিট দশেক পরই আরেকবার নেপাল শিবির কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। মধ্যমাঠ থেকে ফ্রি করা বল জীবন দুর্দান্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর দুর্দান্ত ট্যাকেলে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে ক্রস করেন। সেখানে ছিলেন মিড ফিল্ডার ইব্রাহিম। দারুণ হেড নিয়েছিলেন। কিন্তু বল বেরিয়ে যায় বার ঘেঁষে।
মিনিট দুয়েক পরই রক্ষণের খেলোয়াড় বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রোতে ডি বক্সের ভিতরে ফাঁকায় বল পান তপু বর্মন। সময় নিয়ে হেড নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু এবারও ভাগ্য সহায় হয়নি।
২৬ মিনিটে নেপালের নোয়ারোগ শ্রেষ্ঠা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। বড় চুলের এ ফরোয়ার্ড মধ্যমাঠ থেকে প্রায় একাই বল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। রক্ষণের দুই খেলোয়াড় মানিক ও তপুকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষটায় ফিনিশিং করতে পারেননি। তাতে নেপালের স্কোরলাইনও খোলা হয়নি।
২৮ মিনিটে মানিক মোল্লার দূর পাল্লার শটে গোল না পাওয়া ছিল চরম হতাশার। অবশ্য নেপালের গোল রক্ষকে কৃতিত্ব না দিলে ভুল হবে। লিম্বু ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আঙুল ছুঁয়ে দলকে নিশ্চিত গোল হজমের থেকে বাঁচান।
দুই ফরোয়ার্ড সাদ ও জীবনের রসায়ন আবার দেখা যায় ৩১ মিনিটে। এবার সাদের প্রায় একই রকম ক্রস। ডি বক্সের ভেতরে জীবন শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেননি। তবুও ডান পা আলতো বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার নিশানায় যায়নি।
প্রথমার্ধের বাকিটা সময় দুই দল বল দখলের লড়াইয়ে ছিলেন। কেউ ভালো কোনো আক্রমণ করতে পারেননি। ১-০ গোলের লিড নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করেও বাংলাদেশ আক্রমণে ধার বাড়াতে পারেনি। একাধিক পরিবর্তন এনেছিলেন জেমি ডে। জামাল ভূঁইয়া প্রথমার্ধ শেষে মাঠে নামেনি। তপু বর্মণ দায়িত্ব পালন করলেও শেষ দিকে তিনি চলে যান ডাগ আউটে। অভিষিক্ত সুমন রেজাকেও দেখা যায়নি বিরতির পর।
নতুন শক্তি নিয়ে শেষ ৪৫ মিনিটেও বাংলাদেশের সাফল্য সুফিলের গোল। গোলের কৃতিত্ব পুরোটাই তাকে দেওয়া উচিত। মধ্য মাঠ থেকে বামপ্রান্ত দিয়ে একাই বল টেনে নেন এ ফরোয়ার্ড। এরপর ডি বক্সের ভিতরে ঢুকে নেপালের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিখুঁত ফিনিশিং।
৮০ মিনিটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলে উল্লাসে ফেঁটে পড়ে গ্যালারি। বাংলাদেশের ডাগ আউটেও বাঁধনহারা উল্লাস। সুফিল জার্সি খুলে উল্লাসে মেতে উঠেন। বাকিরাও ঝরান আনন্দবৃষ্টি।
দুই গোল করলেও বাংলাদেশ একাধিক সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু শেষটা রাঙাতে পারেনি। তাতে আক্ষেপ নেই স্বাগতিকদের। দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে শতভাগ উজাড় করে খেলার আনন্দে মশগুল ড্রেসিংরুম। প্রাপ্তির খাতায় জামালরা এ প্লাস পাবে নিশ্চিয়ই। তবে গোল্ডেন এ প্লাসের জন্য নেপালের জালে আরো কয়েকটি গোল করতেই হতো। সামনের ম্যাচের জন্য কি গোল্ডেন এ প্লাস তুলে রাখল বাংলাদেশ?