ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট আপত্তির মুখে পড়েছে। তিন কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ মনোভাব দেখিয়েছে।
বন্দর ৩টির সঙ্গে সম্পৃক্ত সড়কগুলোর সক্ষমতা না থাকাসহ অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বন্দর ও সড়কের মান উন্নত হলেই ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমতি দেয়া হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএ এ বিষয়ে মতামত জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে একই ধরনের মনোভাব নৌ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক মত দিতে যাচ্ছে এ সংস্থাটিও।
বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান নৌ বাণিজ্য চুক্তি ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’র (পিআইডব্লিউটিটি) আওতায় এ তিন বন্দর ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে ভারত। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
তিন বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারতের আগ্রহের কথা জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সূত্র জানায়, ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী হলদিয়া বা কলকাতা থেকে নৌপথে পণ্য ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে সামিট অ্যালায়েন্স কনটেইনার টার্মিনালে (এসআইপিএল) আসবে। সেখান থেকে ট্রাক বা লরিতে সড়কপথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা যাবে। ট্রায়াল রানে রড (টিএমটি বার), খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, আদা ও সিমেন্ট কনটেইনারে ভরে পরিবহন করা হবে। তিন বন্দরে পৃথক তিন সময়ে এসব ট্রায়াল রান পরিচালিত হবে। তবে কবে কোনো পথে ট্রায়াল রান হবে তা পরে জানাবে বলে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন চিঠি দিয়েছে।
পিআইডব্লিউটিটি চুক্তির আওতায় বর্তমানে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট করছে ভারত। কলকাতা থেকে নৌপথে পণ্য এসে আশুগঞ্জ বন্দরে নামিয়ে সড়কপথে ত্রিপুরা রাজ্যে যাচ্ছে। এতে প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা ফি দিচ্ছে দেশটি। আশুগঞ্জ নদীবন্দরে পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা না থাকার কারণ দেখিয়ে এবার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ বন্দর, সামিট এলায়েন্ট কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে দেশটি।
এর আগে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারসংক্রান্ত আরেকটি চুক্তির আওতায় জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনা করে ভারত। ওই ট্রান্সশিপমেন্টে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস করে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে আসাম ও ত্রিপুরা গেছে। পরীক্ষামূলক ওই ট্রান্সশিপমেন্টেও ফি আদায় করেছে বাংলাদেশ।
সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নৌ প্রটোকল চুক্তিতে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জ বন্দর পোর্ট অব কলভুক্ত রয়েছে। মুক্তারপুরে সামিট অ্যালায়েন্স কনটেইনার টার্মিনালকে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৪ ও ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ তিনটি বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব করেছিল ভারত। বৈঠকে ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশ সায় দেয়নি।
১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন এক চিঠিতে এ তিন বন্দরে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রানশিপমেন্ট পরিচালনায় আপত্তি জানিয়ে মতামত দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
চিঠিতে ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ব্যস্ততম সড়ক অতিরিক্ত পণ্যের ভার বহনের উপযুক্ত নয়। দ্বিতীয়ত, পিআইডব্লিউটিটির অধীনে ট্রানজিট অথবা ট্রানশিপমেন্ট বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) নেই। তৃতীয়ত, তিনটি টার্মিনালের সক্ষমতা সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি।
চিঠিতে বলা হয়, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত হলে ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে অতিরিক্ত ভার বহনের পরিবেশ তৈরি হলে এবং এসওপি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।