আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাস্টমসের আয়ের ভাগ চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কাস্টমসের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ পেলে তা নগরীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এতে চসিকের আর্থিক দুরবস্থাও নিরসন হবে।
অবশ্য এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমসের নিজস্ব কোনো আয় নেই, শুধু সরকার নির্ধারিত হারে পণ্য আমদানি-রফতানিতে শুল্ক আদায় করে তা কোষাগারে জমা দেয়।
গত ৭ অক্টোবর আয়ের হিস্যা চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে চিঠি দেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের বার্ষিক আয় হতে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা সিটি কর্পোরেশনের জনসাধারণের সেবা ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্প-কারখানা, যোগাযোগ অবকাঠামো এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি হয় চট্টগ্রাম দিয়ে। ফলে নগরীতে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সড়ক-মহাসড়কগুলো সচল রাখা এবং সার্বক্ষণিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আগের চেয়ে অনেক বেশি শ্রমশক্তি ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
পাশাপাশি নগরীর আবর্জনা অপসারণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতিকরণ, খাল খনন ও নর্দমা সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন ইত্যাদি বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ব্যয় নির্বাহ করা চসিকের অন্যতম দায়িত্ব। এসব বহুমুখী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যা চসিকের বর্তমান আর্থিক সক্ষমতায় কিছুতেই সম্ভব নয়। অথচ টেকসই ও সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হলে তার সুফলভোগী হবেন সবাই। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমসের বার্ষিক আয় থেকে চসিককে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হলে চসিকের আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। এতে নগরবাসীর সেবা ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে বিশেষ অবদান রাখবে।
অবশ্য এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিজস্ব কোনো আয় নেই। শুল্ক আয়ের নেতৃত্ব দেয়া এই কাস্টমস স্টেশন শুধু আমদানি-রফতানি পণ্য থেকে সরকার নির্ধারিত হারে শুল্ক আদায় করে থাকে। ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ের জন্য বিল অব এন্ট্রিপ্রতি ৩০ টাকা নেয়া হলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। আর কাস্টমসের যাবতীয় সংস্কার, উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করা হয় বাজেটে পাওয়া বরাদ্দ থেকে।
এর আগে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নগর উন্নয়নে উপ-কর আরোপের প্রস্তাব দেন। তখন সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্য থেকে যে কোনো ধরনের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে রফতানি মূল্যের ওপর ২ শতাংশ এবং আমদানিকালে আদায় করা আয়কর ও ভ্যাটের ওপর বাড়তি কর আরোপের প্রস্তাব দেন দুই মেয়র। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কের পাশাপাশি উপ-কর আদায় করে তা সিটি কর্পোরেশনের কোষাগারে জমা দেয়ার প্রস্তাব দেন তারা।