ঠাকুরগাঁও জেলায় চলছে টাঙ্গন, সুক, লাচ্ছি নদী ও যমুনা খালের খনন কাজ। খননের পর উত্তোলন করা বালু ফেলা হচ্ছে নদীর পাড় ঘেঁষেই। ফলে বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সে সব বালু আবার ফিরে গেছে নদী ও আশপাশের ফসলিজমিতে। এতে খননের বরাদ্দ গচ্ছা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া নদের পাশের ফসলিজমিতে বালু পড়ে পতিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। সারা দেশে নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন, সুক, লাচ্ছি নদী ও যমুনা খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৪ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকার চুক্তি মূল্যে টাঙ্গন নদীর ৩৫ কিলোমিটার খনন করে ১ লাখ ৫০০০ বর্গমিটার এলাকায় ঘাস লাগানো ও ৭ হাজার গাছ রোপণের কাজটি পায় ঢাকার তাজুল-নিয়াজ জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ১০ জুন। গত ৮ জানুয়ারি নদ খননের কাজটি উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি। কার্যাদেশ অনুযায়ী গত ২২ এপ্রিল নদ খননের কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও খননের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত যেটুকু খনন করা হয়েছে তার বালু আবার উত্তোলন করে স্তূপ করে রাখা হয় নদের পাড় ঘেঁষে। গত জুন ও সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে দুই দফা টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে টাঙ্গন নদের দুই পাড় তলিয়ে যায়। আর নদীর পাড়ে স্তূপ করে রাখা বালুর অধিকাংশই স্রোতের টানে আবার ফিরে যায় নদীরতে ও আশপাশের ফসলিজমিতে। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার উত্তর বঠিণা গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে পাড়েই স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। বৃষ্টির পানির সঙ্গে আবার সেসব বালু নদীই চলে গেছে। এতে টাকা খরচ হলেও যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করা হয়েছে, তা সফল হয়নি। কার্যাদেশ অনুযায়ী খননের পর পাড়ে ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার সে কাজটিও করেননি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণ বলেন, নদের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উপচে গিয়ে তীরবর্তী এলাকার জমিতে চলে যায়। খনন কাজের বিবরণ দিয়ে নদ পাড়ে স্থাপন করা বোর্ডে খনন কাজের ঠিকাদার তাজুল-নিয়াজ জেভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার তাজুল ইসলাম বলেন, খনন কাজের কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। খনন করা বালু বৃষ্টির পানির সঙ্গে আবার নদীতে চলে গেছে এটা স্বীকার করছি। খনন প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী খননের পর উত্তোলিত বালু সরকারি, সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নিলামে বা প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে। এটা যদি করা হয় তাহলে নদীতে আর বালু পড়বে না। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, টাঙ্গন নদী খননের বালু নিয়ে আমরা বিপাকে রয়েছি। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই স্তূপ করে রাখা বালু পানির সঙ্গে চলে যাচ্ছে নদীতে ও আশপাশের ফসলিজমিতে। এতে নদীর খনন করা অংশের অনেক জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে যাওয়া সেসব জায়গা আবার নতুন করে খনন করতে হবে। আর খননের পর উত্তোলন করা বালু দ্রুত সরিয়ে নিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান অথবা প্রয়োজনে বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, নদীর পাড় থেকে বালু সরিয়ে নেওয়া হবে। নিজেদের প্রয়োজনে বালু নিতে আগ্রহী এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বালু বিলি করার চিন্তা-ভাবনা আমরা করছি। আশা করি খুব শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।