করোনায় অর্থনীতিতে গতিসঞ্চারে দাতা সংস্থাগুলোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে নতুনভাবে মূল্যায়ন চলছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দাতাদের অর্থে বাস্তবায়ন হবে এমন প্রকল্প দ্রুত অনুমোদনের লক্ষ্যে একনেকে পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনকে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
বৈঠকে প্রাথমিকভাবে যেসব প্রকল্প শনাক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট নিরসন, অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা, সাইবার নিরাপত্তার মান উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের টেকসই পরিবেশ সৃষ্টি অন্যতম। এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), কেএফডব্লিউ ডেভেলমেন্ট ব্যাংক ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক খাতে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হবে। এজন্য দাতা সংস্থার টাকায় বাস্তবায়ন হবে এমন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন বিলম্ব করা যাবে না। প্রকল্পগুলোর সারসংক্ষেপ দ্রুত সময়ের মধ্যে একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান। অনুমোদনের আগে প্রয়োজনীয় অন্য কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে বলেন। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর মোকাবেলায় কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচিতে চলমান স্বাভাবিক অনেক ব্যয় স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে নতুন নতুন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক করেন। এতে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। এখানে দাতা সংস্থা ১ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। প্রকল্প সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন বৈঠকে বলেন, সংশোধিত ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) অদ্যাবধি অনুমোদন হয়নি। এজন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১০ কোটি মার্কিন ডলার এবং কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ৭০ লাখ ইউরো দেয়ার কথা।
এ প্রকল্প সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সুপেয় পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক বল প্রয়োগ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ প্রকল্প নেয়া হয়। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়াসহ ৮টি উপজেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এ ব্যবস্থা করা হবে।
বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (৫০ কোটি মার্কিন ডলার) ব্যয়ে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। সেখানে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো ও কৌশলগত সুবিধা ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, অন্যান্য অংশের সঙ্গে সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে ভোমরা, সাতক্ষীরা, নাভারন, যশোর, ঝিনাইদহ, বনপাড়া ও হাটিকুমডুলের ২৬০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা হবে। বৈঠকে এ প্রকল্পটি দ্রুত একনেক অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
বৈঠকে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (৫০ কোটি মার্কিন ডলার) ব্যয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি বিনিয়োগ অ্যান্ড ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্পটি নেয়া হলে তা আটকে আছে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহিত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের টেকসই পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে ধরনের অগ্রগতি হয়নি। ওই বৈঠকে এটি পর্যালোচনা করে সংশোধিত ডিপিপির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক বিভাগে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ডিপিপি পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধি মোতাবেক পিইসি সভায় এটি উপস্থাপন করতে বলা হয়। এরপর অনুমোদনের জন্য একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন বিভাগকে।
এদিকে সরকারের ডিজিটাল দক্ষতা, সাইবার নিরাপত্তার মান উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পৃথক প্রকল্প নেয়া হয়। ওই বৈঠকে পর্যালোচনার পর সংশোধিত ডিপিপি দ্রুত পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়। সংশোধিত ডিপিপি পাওয়ার পর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পিইসি সভায় তুলে একনেক বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।