আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নড়িয়া উপজেলা সদরে আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ঘটনার সময় পুলিশের সামনে শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরন ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে ৫২ রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে শতাধিক লোককে আসামী করে নড়িয়া থানায় একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় নড়িয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় র্যাব,পুলিশের টহল জোরধার করা হয়েছে। বুধবার রাতে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া সদরে এ ঘটনা ঘরে বলে জানিয়েছে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন। নড়িয়া পৌরসভার কাউন্সিলর জাফর আহম্মেদ শেখ ও সরে জমিন ঘুরে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা আওয়ামলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাদশা শেখ ও নড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম চৌকিদার, পৌরসভা আওয়ামলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মোখলেছ বেপারী গ্রুপের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। গত ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোক্তারের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নড়িয়া উপজেলা আওয়মীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক শাহ আলম চৌকিদারের ছেলে সিহাব চৌকিদারসহ ৪/৫জন লোক নড়িয়া উপজেলা সদরের গোলাম মাওলা ব্রীজের পশ্চিম পাশে কবিরের কাঠের দোকানে বসে গল্প করছিল। এ সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাদশা শেখের সমর্থক স্থানীয় তেল ব্যবসায়ী রিপন শেখ গিয়ে তাদেরকে শাসিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি তারা শাহ আলম চৌকিদার ও মোকলেছ বেপারীকে অবহিত করার পর তারা নড়িয়া থানাকে জানান। পর দিন বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তৈল ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করে। পরে তার তৈলের দোকানের কোন লাইসেন্স বা কাগজপত্র না থাকায় দোকান বন্ধ করে দেয় নড়িয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনার পর রিপন শেখ চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌকিদারকে গালিগালাজ করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাদশা শেখের সমর্থক রিপন শেখ, ইউনুছ শেখসহ ১০/১২ জন লোক গোলাম মাওলা ব্রীজের পশ্চিম পাশে গেলে মোক্তারেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌকিদারের সমর্থক বিলাশপুর এলাকার সুমন খানসহ ৩০/৪০ জন লোক তাদেরকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বাদশা শেখের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা নুর হোসেন ও বাবু ছৈয়াল (১৮) দুজন এবং অপর গ্রুপের মিজানুর রহমন ও আল আমিন মোড়ল, অনিক বেপারী (২২), সম্রাট (২৫) সহ উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়। খবর পেয়ে নড়িয়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ্এস এম মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম মিজানুর রহমান এর গাড়ির সামনে পর পর কয়েকটি ককটেল ফাটায়। পুলিশ নিজেদের সুরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে ৫২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এ ঘটনার পর থেকে নড়িয়া বাজার ও আশে পাশে লোকজন ও ব্যবসায়ীরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে। ঘটনার সময় বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে শতাধিক অজ্ঞাত লোককে আসামী করে নড়িয়া থানায় একটি মামলা রুজু করার প্রস্তুতি চলছে। নড়িয়া পৌরসভা আওয়ামলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মোখলেছ বেপারী বলেন, আমি নড়িয়া বাজারে মাছের ব্যবসা করি। প্রায় ৩ মাস পূর্বে বাদশা শেখ ও তার লোকজন আমাকে ও আমার ভাইদের মারধর ও ভাংচুর করে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যায়। সেই থেকে বাদশা শেখ আমাদেরকে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। তার ভয়ে প্রায় ৩ মাস আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল রাতে হঠাৎ করে বাদশা শেখের নেতৃত্বে দুই দিক থেকে আমাদের উপর হামলা চালায়। পরে আমরা আত্মরক্ষায় তাদেরকে প্রতিহত করি। নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম চৌকিদার বলেন, আমরা কয়েক জন মিলে নড়িয়া বাজর সংলগ্ন ব্রীজের পাশে একটি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে বাদশা শেখের লোকজন কোন ঘটনা ছাড়াই পরিকল্পিত ভাবে ককটেল বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ৪/৫ জন লোক আহত হয়। নড়িয়া উপজেলা আওয়ামলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাদশা শেখ বলেন, আমার সমর্থক নড়িয়া বাজারের তেল ব্যবসায়ী রিপন শেখের সাথে শাহ আলম চৌকিদারের সমর্থক রাজ্জাক ছৈয়ালের সাথে ডিজেল ক্রয় বিক্রয় নিয়ে ঝগড়া হয়। পরে এ নিয়ে শাহ আলম চৌকিদার ও মোখলেছ বেপারীর লোকজন ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের লোকজনের উপর হামলা করলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আমার ২/৩জন সমর্থক আহত হয়। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) এস এম মিজানুর রহমান বলেন, আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের তিনটি গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শাহ আলম চৌকিদার ও মোখলেছ বেপারী এক পক্ষ নেয় এবং অপর পক্ষ বাদশা শেখের সাথে এ ঘটনা ঘটে। আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রন করতে ৫২ রাউন্ড সর্টগানের (রাবার বুলেট) ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।