বগুড়ায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় শীতকালীন সবজির দাম কমে আসছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি সব ধরনের সবজির দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এতে করে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজির বাজারে বেশি পরিমাণে আসতে শুরু করায় আগের তুলনায় দাম কমেছে। বগুড়া এখন বেশ কুয়াশা পড়ছে। সকালের ঘাসে কিংবা চাষের জমিতে শিশিরে উপস্থিতি জানান দেয় শীত আসছে ধীর পায়ে। আর শীতকে সামনে রেখেই চাষিরা শীত সবজি চাষ করেছে। দাম বেশি পাওয়ার আশায় অনেক কৃষকই আগাম সবজি চাষ করে। সবার আগে আগাম শীত সবজি বাজারে তুলতে ও বেশি আয়ের আশায় একরকম প্রতিযোগিতায় নেমেছে চাষিরা। সেইসব সবজিতে বাজার ভরে উঠেছে। জেলার বেশিরভাগ হাট ও বাজার এবং মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে শীতের নানা সবজি। কৃষি বিভাগ বলছে, শীতের আগেই আগাম শীত সবজি আসবে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। আর আর শীতের মূল সবজি আসবে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন। বিশেষ করে শিবগঞ্জ, সোনাতলা, সদর উপজেলা, শাজাহানপুর ও ধুনটসহ অন্যান্য উপজেলার কৃষকরা প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি যাচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলায়। বগুড়ার সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম মহাস্থান হাট থেকে পাইকাররা কিনে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বগুড়ার উৎপাদিত সবজির চাহিদা রয়েছে প্রচুর। যার ফলে প্রতি বছর এ জেলায় সবজির আবাদ বেশি করেন কৃষকরা। বুধবার দুপুরে বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কালিতলা হাট, কলোনী, খান্দার ও গোদারপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রচুর শীতকালীন সবজি আসছে। প্রতি সবজির দাম কমেছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০টাকা। বাজারে ফুল কপি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০টাকায়। যা গত ১০দিন আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০টাকা। বেগুন প্রতি কেজি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, পটল ৩০টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০টাকা, করল্লা ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০টাকা, বরবটি ৩০টাকা, শসা ৪০টাকা, টমেটো, ১০০টাকা ও মূলা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি পিয়াজ ১০০টাকা, নতুন পাতা পিয়াজ ৮০টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০টাকা সিম ৫০টাকা ও আলু কার্ডিনাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। শহরের কালিতলা হাটের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী সোনা মিয়া জানান, বাজারে এখন প্রচুর সবজি। দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতারা বেশি বেশি করে সবজি কিনছেন। বাজারে শীত সবজির আমদানি আরও বাড়বে। আমদানি যত বাড়বে ততই দাম কমবে। পাইকারি বাজারেও এখন সবজির দাম কম। শহরের দত্তবাড়ি থেকে বাজার করতে আসা রেজাউল করিম রিয়াদ জানান, শীতকালীন সব ধরণের সবজি বাজারে উঠেছে। আগের চেয়ে এখন দাম অনেক কম। তবে বাজারে আলু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। এদিকে বগুড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম মহাস্থান হাটে প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শীতকালীন সবজি আসছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে থাকেন এই হাটে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির বাজারে দাম অর্ধেকের নিচে নিমে এসেছে। কৃষকরা বলছেন, জেলায় এ বছর শীতকালীন সবজির আবাদ প্রচুর হয়েছে। ফলও ভালো হয়েছে। হঠাৎ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় দাম অনেক কম। দাম আরও কমে গেলে লোকসান হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মতলুবর রহমান জানান, এ বছর বগুড়ায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিকটন আগাম ফলন পাওয়া যাবে। আর জেলায় শীতকালীন সবজির চাষ হয়ে থাকে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এ থেকে প্রতি বছর চার লাখ মেট্রিক টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। আবহাওয়াগত কারণে বগুড়ায় সবজির ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। এবছরও ভালো সবজি চাষ হয়েছে বগুড়ায়। এ কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।