বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ৪টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লালমনিরহাট বিভাগ। এই বিভাগে প্রায় ৯শত ১০ টি আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে। যেখানে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে সাধারণ মানুষজন ও ব্যবসায়িরা। রেল কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ৯ শত ১০টি কোয়ার্টারের মধ্যে ৭শত কোয়ার্টার জনগনের দখলে। আবাসিক কোয়ার্টারগুলো অবৈধ দখলদারের হাত থেকে রক্ষা করে বিধ্বস্ত কোয়ার্টারগুলো মেরামতসহ নতুন ভবন নির্মান করে রেল কর্মচারিদের বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্নিক ফান্ড বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব বেড়ে যাবে। জেলার সীমানা জুড়ে বিভিন্ন রেল স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন সংলগ্ন আবাসিক কোয়াটার গুলোয় স্টেশন মাষ্টারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ কোয়ার্টার গুলো তৈরি করেন। এতে করে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের আর্থিক আয় ও সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। কিন্তু রেল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও সঠিক তদারকির অভাবে কোটি-কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেলবিভাগ আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আয়। বর্তমানে অধিকাংশ কোয়ার্টার রয়েছে বহিরাগতদের দখলে। বিট্রিশ আমলের তৈরি লাল রংগের ভবনগুলো অধিকাংশ জীর্ন এবং বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রেল কর্মচারীরা কোয়ার্টার গুলোয় না থাকায় দখল করে নিয়েছে বহিরাগতরা। সেই সাথে চুরি হয়ে যাচ্ছে ভবনের ইটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্ষতি হচ্ছে সরকারি অর্থ এবং লুটপাট হচ্ছে রেলের বিভিন্ন যন্ত্রণাংশ যা দেখেও কোন প্রতিকার করছেন না রেল কতৃপক্ষ। কয়েকটি কোয়ার্টার গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বসবাস করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মোহুরী, মুদি-দোকানদার, বাস-ট্রাক চালক, হেলপার, হকার, এনজিও কর্মী, শ্রমিক ও দিনমজুররা। বছরের পর বছর ধরে আছেন তারা। ওই সব বসবাসকারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এক শ্রেনীর রেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অলিখিত ভাবে মাসিক ভাড়া চুক্তি হিসাবে বসবাস করছেন। যার ভাড়ার টাকা কোন দিনও রেলের আর্ণিক ফান্ডে বা সরকারের রাজস্ব ফান্ডে জমা হবে না। আবাসিক কোয়ার্টারগুলো শুধু অবৈধ দখলে নয়, তার সাথে যুক্ত রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। বেশির ভাগ কোয়ার্টার গুলোয় নেই বিদ্যুৎ এর মিটার। পৌর শহরের আনাচে-কানাচে বেশিরভাগ রেল কোয়ার্টারে মিটার বিহীন বিদ্যুৎ সংযোগ। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারি মার্সিক মাসোহারা হিসাবে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। শহরের সাহেবপাড়া, বাবুপাড়াসহ বেশির ভাগ কোয়ার্টারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, এভাবে চলছে দিনের পর দিন।
কয়েকজন রেল কর্মচারি বলেন, উন্নতমানের কোয়ার্টার গুলোতে থাকছে কারা ? অথচ আমরা রেলের কর্মচারি হয়েও পাচ্ছি না কোয়ার্টার বরাদ্দ। কতৃপক্ষ সব জেনেও না জানার ভান করছে। কোয়ার্টার গুলো শুধু দখল নয়, ইতিমত বেচা কেনাও চলছে। অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন রেল কর্মকর্তা বলেন, রেলের বেশ কিছু কোয়ার্টার বসবাসের জন্য উপযোগী নয় অথচ সেখানেও বসবাস করছে সাধারণ মানুষ। আবার সেগুলো কেনা-বেচাও হচ্ছে। রেলের সম্পদ সাধারণ জনগন কি ভাবে কেনা-বেচা করে তা আমার বোধগম্য নয়। কতৃপক্ষের অযন্তে অবহেলায় দীর্ঘদিনের রেলের ঐতিহ্য হোসেন শহীদ ইনস্টিটিউট আজ নষ্ট হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, জানালা-দরজা চুরি হয়ে গেছে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। আরও একটি রেলের ঐতিহ্য নষ্টের দারপ্রান্তে দাড়িয়েছে রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবটি। দীর্ঘদিনেও হচ্ছে না কোন সংস্কার। ক্লাবটির আয়কৃত অর্থের নেই হদিস। যে কোন সময় দেয়াল ধ্বসে বড় ধরনের দূর্ঘনা ঘটতে পারে সে দিকে নজর নেই রেল কতৃপক্ষের। রেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে রেলের, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি-কোটি টাকার রাজস্ব আয়। এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডি-ই-এন) আহসান হাবিবের সাথে দেখা করলেও তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুস সালাম এ বিষয়ে বলেন, রেলওয়ের কিছু কিছু কোয়ার্টার আছে যেগুলো বসবাসের উপযোগী নয় পরিত্যাক্ত, মেরামত বা সংস্কার বাবদ বরাদ্দ আসে কি না খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং অবৈধ দখলদারের হাত থেকে কোয়ার্টাগুলো উদ্ধারসহ মেরামত করা হবে।