পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানাধীন পূর্ব জৌসার এলাকায় বসবাসকারী জাফর আলী (৪২), পিতা মোঃ জব্বার আওলাদার এর সাথে একই এলাকায় বসবাসকারী রায়হান মোল্লার সাথে মসজিদের জমি-জমা অবৈধভাবে জোর দখলকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন যাবৎ বিরোধ চলছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে গত ০৭/০৮/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৯:০০ ঘটিকার সময় রায়হান মোল্লা তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে উল্লেখিত পূর্ব জৌসার জামে মসজিদে চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিচ্ছিল উক্ত বিষয়টি দেখতে পেয়ে জাফর আলী রায়হান মোল্লাকে বেড়া দিতে নিষেধ করে। এতে রায়হান মোল্লা জাফরের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে রায়হানের হাতে থাকা ধারালো দাও দিয়ে জাফরকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ দিলে জাফর তার পিঠে রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। অতঃপর জাফরের পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসলে রায়হান মোল্লা ও তার অন্যান্য সহযোগীরা জাফরের পরিবারের লোকজনদেরকে উপর এলাপাথাড়ি আক্রমন ও বেধড়ক মারধর করে। এছাড়াও মসজিদের থাই গ্লাস ভাংচুরসহ আনুমানিক ২০,৫০০/- (বিশ হাজার পাঁচশত) টাকার ক্ষতিসাধন করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করতঃ উক্ত স্থান হতে চলে যায়। উক্ত ঘটনায় জাফর আলীসহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। অতঃপর জাফর আলীর পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় জাফর আলীসহ আহত সবাইকে চিকিৎসার জন্য নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। পরবর্তীতে একই তারিখ আনুমানিক দুপুর ১২:০০ ঘটিকায় জাফর তার নিজ বসত বাড়ীর পূর্ব পাশে অবস্থান করাকালে রায়হান মোল্লা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ১৫-২০ জন সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জাফরের উপর অতর্কিত আক্রমন করে। এতে আক্রমনকারীদের হাতে থাকা লোহার রড, লাঠি-সোটা ইত্যাদি দ্বারা জাফার আলীর হাত, পা ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। মারধরের একপর্যায় জাফরের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং জাফর আলীকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অটোরিক্সাতে উঠানোর সময় রায়হান মোল্লা পুনরায় তার হাতে থাকা কাঠের মাডাম দিয়ে জাফরের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তার মাথায় সজোরে আঘাত করে। অতঃপর ভিকটিম জাফরের ভাই মিজান হাওলাদার স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় জাফরকে গুরুতর ও রক্তাক্ত আহত অবস্থায় নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জাফরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে জাফরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঐদিন ০৭/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল আনুমানিক ০৫:৩০ ঘটিকায় উক্ত হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম জাফরকে মৃত ঘোষনা করেন। উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের পর মৃত জাফর আলীর ভাই মিজান হাওলাদার (৩৩) বাদী হয়ে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানায় চাঞ্চল্যকর জাফরকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী রায়হান মোল্লাসহ ১০ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল রোববার দুপুর আনুমানিক ১৪:১০ ঘটিকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানাধীন দনিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে পিরোজপুরের নেছারাবাদ এলাকায় চাঞ্চল্যকর জাফর আলীকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. রায়হান মোল্লা @প্রিন্স (২৮), পিতা-সিদ্দিকুর রহমান (হিরুল), সাং-বেশাইনখান, থানা-ঝালকাঠি সদর, জেলা-ঝালকাঠি এবং উক্ত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত সাজ্জাদ মোল্লা @হাদিস (২৬) ও সিদ্দিকুর রহমান @হিরুল (৬০), উভয় পিতা-মৃত আঃ রইফ মোল্লা, সাং-পূর্ব জৌসার, থানা-নেছারাবাদ, জেলা-পিরোজপুরদের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা উক্ত হত্যাকান্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফাতরকৃত আসামী রায়হান মোল্লা @প্রিন্স অত্যান্ত খারাপ ও উশৃঙ্খল প্রকৃতির লোক। উক্ত এলাকায় রায়হান তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, জমি দখল ও প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে করত। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।