অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড দিনাজপুর জোনে ডিজিএম হিসেবে শাহানাজ চৌধুরী গত ২৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ঘুষ ও অবৈধ সুবিধা নিয়ে ঋণ দেয়াসহ বদলি বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি যোগদানের পর থেকে মেধাবী কর্মকর্তাদের প্রমোশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করে নিজের খেয়াল খুশিমত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সরকারী নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে পারিবারিক কাজে অফিসের গাড়ীটি ব্যবহার করে আসছেন। অফিসের গাড়ি এখন তাদের আত্মীয় স্বজনদের ব্যক্তিগত গাড়ীতে পরিনত হয়েছে। বিনা অনুমতিতে ছুটি কাটানো এবং ষ্টেশন লীভ করে ঢাকায় অবস্থান করা তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তিনি অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার সুবিধার্থে একজন অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অফিসারকে স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তার মাধ্যমে বিভিন্ন শাখা হতে নগদে ও জোনাল অফিসের অস্হায়ী কর্মচারী নাইমুল হোসেন নয়ন এর সঞ্চয়ী হিসাবের মাধ্যমে ম্যানেজারদের নিকট হতে ঘুষ আদায় করে থাকেন। একটি সুত্র জানায়, ডিজিএম শাহানাজ চৌধুরী সার্কেল জিএম’কে পাত্তা তো দেননা বরঞ্চ বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে তার সম্মানহানী করেন। ডিজিএম’র ভুল ত্রুটি বিষয়ে ব্যাংকের স্টাফরা সমালোচনা করলেই অপদস্থ করা হয়। সার্কেল জিএম এসব বিষয় অবগত হওয়ার পরও তিনি অসহায়ের মত নিরবতা পালন করে আসছেন। এই নিরবতাকে পুজিঁ করে ডিজিএম নিজ পকেট ভারি করার জন্য হাতে গোনা কতিপয় ম্যানেজারদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঘুষ বাণিজ্যের এক বিশাল সিন্ডিকেট । ব্যাংকে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র অফিসারদের অবমুল্যায়ন করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জুনিয়র অফিসারদের ম্যানেজার পদে পদন্নোতি দিয়েছেন। বিভিন্ন মিটিংয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার মত কথা বার্তা বলেন। তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের অন্যত্র বদলী করেছেন। প্রায়ঃশ শাখা ম্যানেজারদের বদলীর হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দাবী করেন লক্ষ লক্ষ টাকা। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা -কর্মচারীরা জানান, চাকুরির সুবাদে ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তারা কেউ মুখ খুলছেন না। তারা আরও জানান যে, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম এর সাথে গভীর সম্পর্ক এবং তার অনুসারী হওয়ার কারণে ডিজিএম শাহানাজ চৌধুরী খেয়াল খুশিমত বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। অডিট টিমের লোকজন ব্যাংকে আসলে তাদেরকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। সুত্রটি আরও জানায়, ডিজিএম ঋণ গ্রহীতার ফাইল মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নবায়ন ও বর্ধিত করেন এমনকি ব্যাংকের পিয়নের মাধ্যমে অফিসের বিভিন্ন ফাইলপত্রের কাজকর্ম বাসায় নিয়ে স্বাক্ষর করে থাকেন। জেনারেটর অফিসে ব্যবহার না করেও প্রতিদিনই পেট্রোলের ভাউচার ছেড়ে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করছেন। তিনি অফিসের বিভিন্ন রকম কেনাকাটা ঠিকভাবে না কিনে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। দিনাজপুর জোনের আওতায় মালদহপট্টি, হাকিমপুর, সেতাবগঞ্জ ও ফুলবাড়ী সহ বিভিন্ন শাখার ক্লায়েন্টরা ডিজিএম’কে মোটা অংকের ঘুষ প্রদান না করলে তাদের নানা অযুহাত দেখিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। ডিজিএম তার স্থাপনা নির্মান না করেই অবৈধভাবে (ভাইয়ের জমি) ব্যাংকের কর্মচারী গৃহ নির্মাণ ঋণ নিয়েছেন। এমনকি ব্যাংকের গাড়ি চালক মমিনুলের স্ত্রীর কোন প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও অগ্রণী ব্যাংক লিঃ মুন্সিপাড়া শাখার মাধ্যমে সিসি লোন মঞ্জুরী করে দিয়েছেন। এছাড়া জোনের বিভিন্ন শাখার ম্যানেজারের মাধ্যমে স্বনামে-বেনামে আত্মীয় স্বজনকে লোন নিয়ে দিয়েছেন। যেমন কমান্ডিং এরিয়ার বাহিরে (প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে) বিরামপুরের একজন খেলাপী গ্রাহককে তার আত্মীয় পরিচয়ে বড় অংকের ঋণ দিয়েছেন। এছাড়া আরও লোন দেওয়ার জন্য ক্রমাগত শাখা ম্যানেজারদের চাপ প্রয়োগ করছেন। এছাড়া জোনাল অফিসের কর্মচারী আক্তার হোসেন বাবু এখন তার বাসার স্হায়ী কাজের লোক। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মচারীকে দিয়ে তিনি তার বাসার কাপড় কাচা, ঘর মোছা, বাজার করাসহ বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিকটু কাজ করিয়ে থাকেন। এসব বিষয়ে সিবিএ নেতৃবৃন্দ কিছু বলতে গেলেই তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এসব বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৩ অক্টোবর ২০২২ইং তারিখে প্রধান কার্যালয় থেকে এমডি স্কোয়াড দিনাজপুরে সরেজমিন তদন্তে এসে এসব অভিযোগের প্রমাণ পেলেও ডিজিএম কৌশলে তাদেরকে ম্যানেজ করেন। যার ফলে অগ্রণী ব্যাংক লিঃ দিনাজপুর জোনে ডিজিএম শাহানাজ চৌধুরী যোগদানের পর থেকে ব্যাংকিং সেক্টরে অস্হিরতা বিরাজ করছে । নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন যে, দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে অনেক জোনাল হেডের সাথে কাজ করেছি কিন্তু ডিজিএম শাহনাজ চোধুরীর মত এত দূর্নীতিবাজ, হিংসুটে এবং দাম্ভিক জোনাল হেড দেখিনি। এভাবে চলতে থাকলে অগ্রণী ব্যাংক দিনাজপুর জোনের অপূরণীয় ব্যবসায়ীক ক্ষতি হবে। বিস্তারিত তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়বে বলে অনেকে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।