নরসিংদীতে জেলা পরিষদের ঠিকাদারদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ভুয়া অনুদান দেওয়া,গোরস্তান ও মসজিদ-মন্দিরের বরাদ্দে অনিয়ম, ভুয়া বিল-বাউচার করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, নতুন প্রকল্প অনুমোদন আনতে অগ্রিম টাকা গ্রহণ ও আপ্যায়নের নামে লাখ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের উন্নয়ন বিষয়ে পুর্বে জনসাধারন জানতে পারলেও সিইও শরিফুল ইসলাম যোগদানের পর জেলা পরিষদের কোন উন্নয়নের তথ্য জানতে পারেনি সাধারন জনগন । যারফলে অনেকেই জেলা পরিষদের ওয়েব সাইটে উন্নয়নের বিষয় জানার চেষ্টাকরেন।ওয়েব সাইটে পুর্বের উন্নয়নের বিবরন থাকলেও বর্তমান কোন আপডেট নেই। যারফলে এই অফিসের কোন তথ্য জানার চেষ্টাকরে ও সাধারণ জনগন জানতে পারছে না, একারনেই অন্যায়কেই নিয়মে পরিনত করছেন এই কর্মকর্তা। কোন সংবাদ কর্মি তার অনুমতি ছাড়া এই অফিসে ডুকতে পারেনা। আর কেউ অনুমতি নিয়ে ডুকলেও সাথে কোন ক্যামেরা নিতে পারবেনা। আর কেউ অফিসের ছবি তুলছে তখনই প্রধান নির্বাহীর ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তার উপর হামলা করে অফিসে আটক করে বিভিন্ন অফিসে ও তার আস্থাবাজন সাংবাদকর্মীদের ফোন করে বিভিন্ন মামলার ভয় দেখাচ্ছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, জেলা পরিষদের বিভিন্ন বাংলো ও জমি ব্যবহার করে যারা ভাড়া দিচ্ছে না, তারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কার কাছে জেলা পরিষদের পাওনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সুপারের কাছে ২৬ লাখ, সিভিল সার্জনের কাছে ২৪ লাখ ও জেলা প্রশাসনের কাছে হিসাব ছাড়া টাকা পাবে জেলা পরিষদ। অতি সম্প্রতি এসব বকেয়া চাওয়ার পর জেলা প্রশাসকসহ এই তিন কর্মকর্তার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদের শহরের ভৌয়াকুরের ডাকবাংলোতে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দরজায় নাম লিখে ১৯ দিন ধরে বসবাস করছিলেন। পরে এনডিসি এ কে এম হাছানুর রহমান ডিসি সাহেবের রেফারেন্স দিয়ে মাত্র দুই দিনের ভাড়া দিতে চান। পরে ভাড়া না নিয়ে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে বের করে দেন।এ ব্যাপারে এনডিসি এ কে এম হাছানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিইও স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। জানি না তিনি কেমন করে এসব বলেছেন। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট কেউ কখনো ডাকবাংলোতে থেকেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই।শরীফুল ইসলাম আরও জানান, আগের সিইও সাহেবরা ঢাকা থেকে এসে অফিস করতেন। তারা জেলা পরিষদের তিনতলা বাংলোতে থেকে রঙ্গ-তামাশা করতেন। মাদক সেবন ও নারী নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করতেন। এখানে এখন এসব আর চলে না বলে জানান তিনি। এসব কারণেও একটি চক্র তার পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। সিএ নুর এ নাঈমও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তাকে অন্যত্র বদলি করার জন্য তিনি আগের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূঞাকেও অনুরোধ করেছিলেন। কিš‘ তিনি তা করেননি, তিনি এখনো এই জেলা পরিষদে বহাল তরিয়তে থেকে নানা অনিয়ম করছেন বলে জানান তিনি। সদর ডাকবাংলোতে তারই অফিস সহকারী খোরশেদ আলম ও হিসাব রক্ষক রোমান মিয়া বিনা ভাড়ায় বসবাস করতেন। বিনা ভাড়ায় থাকতেন রায়পুরার এক উপজেলা চেয়ারম্যানও। সবাই জানে সেখানে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম হতো। ডাকবাংলো তারা দখল করে ফেলেছিল প্রায়। তিনি এসে গত দেড় বছরে এসব ঠিক করেছেন। এখন সব নিয়মের মধ্যে চলছে। ঢাকায় তার বাড়ি থাকা সত্ত্বেবও তিনি ডাকবাংলোতে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন। তিনি নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে আরও বলেন, তিনি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হতে পারেন না।শুধু সিইও নয় অভিযোগের পাহাড় প্রধান সহকারী খোরশেদ আলম , হিসাব রক্ষক রোমান মিয়া, সিএ নুর এ নাঈম ও দারোয়ান কাম কেয়ার টেকার শহীদ মিয়ার বিরুদ্ধেও। তবে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার না করলেও তারা যে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তা স্বীকার করেছেন সিইও শরীফুল ইসলাম। এদিকে খোরশেদ আলম ও রোমান মিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা জানান, আমাদের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃৃপক্ষ যেভাবে আদেশ নির্দেশ দেয় তা আমরা পালন করি মাত্র।এদিকে জেলা প্রশাসক আবু নঈম মোহাম্মদ মারুফ খান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসনের তিন তলাবিশিষ্ট আধুনিক একটি সার্কিট হাউজ রয়েছে। সরকারি মেহমান এলে এখানে আপ্যায়ন করতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। সুতরাং ডাকবাংলো ভাড়া নেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে প্রায়ই কথা হয় অথচ জেলা প্রশাসনের কাছে জেলা পরিষদের কোনো বকেয়া থাকার কথা কখনো তিনি জানাননি বলে জানান জেলা প্রশাসক।সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম জানান, তিনি গত আড়াই বছর ধরে এই জেলায় কর্মরত আছেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বিভিন্ন সভা সেমিনারে দেখা হয়। কোনো দিন বলেননি। এমনকি ফোনেও কখনো জানাননি বলে দাবি করেন সিভিল সার্জন। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হেড অ্যাসিসটেন্ট ইয়াসিন আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জেলা পরিষদ তাদের কাছে কোনো টাকা পাবে না। এ সব বিষয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
###