দুই দশক ধরে চলা নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই লন্ডন পুলিশের এক কর্মকর্তা নিজের অপরাধ স্বীকার করলেন। ৪৮ বছর বয়সী এই পুলিশ কর্মকর্তা ৪৯টি অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। তার স্বীকার করা অপরাধের মধ্যে ২০টি ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও নির্যাতন এবং মিথ্যা কারণ দেখিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনাও রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অফিসার ডেভিড ক্যারিক তার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়েছেন। তিনি পুলিশ সদস্য হওয়ায়, কেউ তার বিরুদ্ধে বলা কথা বিশ্বাস করবে না, এমন কথাও বলেছেন তিনি।

মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মার্ক রাউলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “এই ব্যক্তি নারীদের সঙ্গে জঘন্য দুর্ব্যবহার করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।”

এই ঘটনায় ব্রিটেন জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এমন সব ঘটনায় পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা চুরমার হয়ে গেছে এবং তা পুনরুদ্ধারে পুলিশ বাহিনীকে অবশ্যই এমন কর্মকর্তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

‘একের পর এক ঘটনা’

ক্যারিক ২০০১ সালে লন্ডন পুলিশে যোগ দেন। যেসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে তিনি অনলাইন ডেটিং অ্যাপ বা বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে পরিচিত হতেন। সেখানে নিজের পুলিশ পরিচয় ব্যবহার করে তিনি ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতেন।

প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা যসওয়ান্ত নারওয়াল জানান, এরপর ক্যারিক ‘সেসব নারীদের তিনি যৌন নিপীড়ণ এবং ধর্ষণের সুযোগ খুঁজতেন।”

ক্যারিক এসব নারীদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও ধংস করে ফেলতেন। অনেকক তিনি তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক করে রাখতেন এবং তাদের পোশাক, এমনকি ঘুমের সময়ও নিজের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

লন্ডন পুলিশ: ‘আমরা ব্যর্থ’

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ লন্ডনের মেয়র কার্যালয়। মেয়র সাদিক খান এক টুইটে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এমন অপরাধ সংঘটন করতে পারায় দুঃখও প্রকাশ করেছেন তিনি।

সাদিক খান বলেছেন, “এই লোকটি এত দীর্ঘ সময় ধরে মেটের জন্য কাজ করতে পেরেছিল কীভাবে, এ নিয়ে লন্ডনবাসী হতবাক হওয়ারই কথা। এত ভয়ঙ্কর উপায়ে একজন কর্মকর্তা কীভাবে তার পদের অপব্যবহার করতে পেরেছিলেন এই গুরুতর প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হবে আমাদের।”

ভুক্তভোগীদের কাছে লন্ডন পুলিশের কমিশনার রাউলি সোমবার ক্ষমা চেয়ে বলেছেন ‘পদ্ধতিগত ব্যর্থতার’ কারণে এতদিন ক্যারিক শাস্তি পাননি। তিনি বলেন, “আমরা ব্যর্থ হয়েছি এবং আমি দুঃখিত। তার একজন পুলিশ কর্মকর্তা হওয়া উচিত ছিল না।”