গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে আবারো প্রাণীর মৃত্যুর হিড়িক পড়েছে। পার্কে প্রাণী মৃত্যুর ঘটনা লুকোচুরির করে রহস্যের সৃষ্টি করছে। এ দফায় ৩৩ দিনের মধ্যে একটি হাতি, একটি সিংহী ও একটি ওয়াইল্ডবিস্টের মৃত্যু হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এই সাফারি পার্কে প্রাণীদের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ায় এ ধরণেল প্রাণি মৃত্যুর ঘটনা আবারো ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রীপুর থানা ও পার্কসহ একাধিক সূত্রে থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায়, গত ২০২২ইং সনের ১৯ নভেম্বর একটি ব্লুওয়াইল্ডবিস্ট ও ১৬ ডিসেম্বর একটি সিংহী এবং গত ২১ ডিসেম্বর একটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এসব তথ্য গোপন রাখেন সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
প্রাণি মৃত্যুর বিষয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় জিডি করা হলে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। প্রাণিমৃত্যু ঘটনায় পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক এ সি এফ রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ ডায়রি গুলো করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের একটি সূত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানায়, এর আগে জেব্রা, সিংহ ও বাঘের মৃত্যু নিয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল। ফলে এবারের তথ্য পার্কের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কাউকে জানতে দেওয়া হয়নি। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সেটির ব্যবস্থাপনা করা হয়।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতে, বেষ্টনীতে প্রাণী মারা যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকে। এরমধ্যে সঠিক পরিচর্যা, খাদ্য, বাসস্থান এসব বিষয়ের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হয়। এগুলোর যেকোনো একটির সমস্যা হলেও প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে। মূলত প্রাণীগুলোর সঠিক পরিচর্যা না পেলে বা অবহেলা থাকলে প্রাণী মৃত্যুর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং থানায় জিডি সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে একটি ওয়াইল্ডবিস্টের মৃত্যু হয়েছে। পরের দিন ২০ নভেম্বর শ্রীপুর থানায় এবিষয়ে একটি জিডি করা হয়। ওই জিডিতে ওয়াইল্ডবিস্টটির বার্ধক্যের কারণে মারা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর বেষ্টনীর ভেতরেই একটি সিংহীর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর একই থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। সাধারণ ডায়রীতে উল্লেখ্য করা হয় সিংহীটি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। তার আনুমানিক বয়স ১৪ বছর। এর পাচঁদিন পর অর্থাৎ গত ২১ ডিসেম্বর শেল বাহাদুর নামে একটি পুরুষ হাতির মৃত্যু হয়। এঘটনায়ও যথারিতি পরদিন ২২ ডিসেম্বর আবারো একই থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়।
ওই সাধারণ ডায়েরি সুত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে হাতিশালায় গত ২১ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় শেল বাহাদুর নামে পুরুষ হাতিটি অপর একটি হাতি আমির বাহাদুরের আক্রমণে মাথায় প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তাৎক্ষণিক ব্রেনস্ট্রোক করে হাতিটি মারা যায়। মারা যাওয়া পুরুষ হাতিটির আনুমানিক বয়স ৪৭ বছর। পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের দায়িত্বে নিয়োজিত ভেটেরিনারি সার্জন মারা যাওয়া হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন এবং ওই হাতিটি ব্রেনস্টোক কারণে মারা গেছে মর্মে অবহিত করেন।
গাজীপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কালিয়াকৈর সার্কেল আজমীর হোসাইন জানান, হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে প্রাণী মৃত্যুর বিষয়ে শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি হচ্ছে। সম্প্রতি একটি হাতি, একটি সিংহী ও একটি ওয়াইল্ডবিস্ট মৃত্যুতে জিডি হয়েছে।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জেব্রার পাল ছিল ৩১ সদস্যের গত বছরের শুরুর দিকে ১১টির মৃত্যুর পর পার্কে এখন আছে ২০টি জেব্রা। এ ছাড়া একটি বাঘের মৃত্যুর পর এখন তাদের পরিবার ৯ সদস্যের। সর্বশেষ গত মাসে একটি সিংহী মারা যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বর্তমানে সিংহী আছে মাত্র একটি। সিংহ আছে সাতটি।
প্রসঙ্গত, দায়িত্বে অবহেলার কারণে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা এবং একটি বাঘ মারা যাওয়ার ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক এ সি এফ তবিবুর রহমানসহ চারজনকে বরখাস্ত করেছিলেন।