ফরিদপুর সদর উপজেলার শোভারামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের আলোচিত নবম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী করায় অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে সত্যতা পেয়েছে তদন্তকারি কর্মকর্তা। যদিও ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে স্কুল কমিটির পক্ষ হতে ম্যানিজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করলেও ঐ সময় তদন্তকারি কর্মকর্তাগণ অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ঘটনার কোন সত্যতা পাননি মন্তব্য করে প্রতিবেদন লিপি জমা দিয়েছিলেন। ফরিদপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তদন্তকারি কর্মকর্তা এম. এ. নাহার স্বাক্ষরিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২২ সালের ০৩ অক্টোবর ঐ স্কুলের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রকাশ কুমার রায়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পর স্কুল শিক্ষকের আকস্মিত ফোন আসায় শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে ঐ শিক্ষক বাড়ি চলে যায়। ঐ সময় বাহিরে বৃষ্টি হওয়ার কারনে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থীসহ তার এক বান্ধবী মিলে স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর কক্ষের পিছনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তৎকালিন সময়ে স্কুল শারদীয় দুর্গোৎসবের বন্ধ ছিলো। ঐ সময় স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মো: নাজমুল হক শিক্ষার্থীদের ইংরেজী প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। পরে বৃষ্টি কিছুটা কমে গেলে সকল শিক্ষার্থীরা স্কুল ত্যাগ করে বাড়ি চলে যাওয়ার পর ভুক্ত ভোগী ঐ শিক্ষার্থীকে ব্যাক্তিগত কথা আছে বলে অভিযুক্ত ধর্মীয় শিক্ষক মো: নাজমুল হক তাকে রুমে থাকতে বলে এবং ঐ শিক্ষার্থীর হাত চেপে ধরে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় ঐ শিক্ষার্থীর সাথে থাকা তার বান্ধবী বাইরে অবস্থান করছিলো বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ দিকে ঘটনার পরপরই স্কুল কমিটির পক্ষ হতে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা এ বিষয়ে কোন তথ্য না দিয়ে উল্টো তাদের সাথে খারাপ আচরন করেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাড়ি না থাকায় তার সাথে কথা বলতে পারেনি স্কুল কমিটির তদন্ত কর্মকর্তাগণ। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বান্ধবী তাদের জানিয়েছিলেন ঘটনার সময় সে বাহিরে অবস্থান করলেও রুমের দরজা জানালা খোলা থাকার পরেও সে কোন ধরনের খারাপ কিছু দেখতে পায়নি। পরে ঐ তদন্ত টিম এলাকাবাসি মারফত জানতে পারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবার আগে থেকেই খারাপ প্রকৃতির। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বান্ধবী ও এলাকাবাসীর তথ্য বিবেচনা করে তারা ঘটনার সত্যতা পাননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন। এর আগে ঐ শিক্ষার্থী ঘটনার পর স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিলে তার মা স্কুলে না যাওয়ার কারন জানতে চাইলেই ঘটনাটি খুলে বলে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকবৃন্দের স্বরনাপন্ন হয়ে মৌখিক ভাবে এ ঘটনা জানানোর পরেও ভালো কোন সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ করেন। পরে বাধ্য হয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে ইউএনও লিটন ঢালি ফরিদপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের ভার দেয়। এমনকি তদন্ত চলাকালে প্রভাবশালী মহলের হুমকি ধামকির ভয়ে ঘটনার ন্যার্য বিচার স্বার্থে মানববন্ধনের উদ্যোগ নিলেও তাদের মানববন্ধনে বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে ঐ শিক্ষকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছিলেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ফরিদপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাফর খান জানিয়েছিলেন ঐ শিক্ষার্থীর মা বিষয়টি লিখিত ভাবে আমাদের অবগত না করেই সে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে। তার পরেও ঐ শিক্ষককে সাময়িক ভাবে স্কুলে আসতে নিষেধ করে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টির কোন সত্যতা পায়নি। মানববন্ধনের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালি জানান, ফরিদপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে ঘটনা সত্যতা পাওয়ার পরেই আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করেছি। তিনি মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে ডিজি মহোদয় কে অবগত করেছেন। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে স্কুল কমিটি কি তদন্ত করেছে তা আমাদের বিবেচ্য নয়। উল্লেখ্য গত ৩ অক্টোবর শোভারামপুরের কালীবাড়ি এলাকায় স্কুল শিক্ষক প্রকাশ কুমার রায়ের নিকট প্রাইভেট শেষে ফেরার পথে বৃষ্টি শুরু হলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার এক বান্ধবী অন্যদের মত স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ সময় স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক নাজমুল হাসানের কুদৃষ্টি পরে ঐ শিক্ষার্থীর উপর। একপর্যায়ে ঐ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া সকল শিক্ষার্থীকে আকস্মিত ছুটি দিয়ে নবম শ্রেণীর ঐ শিক্ষার্থীকে জরুরী কথা আছে বলে থাকতে বলে। সেই সাথে তার বান্ধবিকেও স্কুল থেকে চলে যাওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে একটি রুমে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানী করার চেষ্টা করে। তবে ধস্তাধস্থির একপর্যায়ে ঐ শিক্ষার্থী স্কুল শিক্ষক নাজমুল এর হাত থেকে কোন ভাবে নিজেকে রক্ষা করে দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে ঐ সময় অভিযোগ উঠেছিলো।