রুশ-অধিকৃত ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে মার্শাল ল জারির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) ওই চার অঞ্চলে মার্শাল ল জারির এক আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদারে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের সাথে দখলকৃত অঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ সমন্বয়কারী পরিষদ গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই অভিযানের মধ্যদিয়ে দেশটির এক পঞ্চমাংশ এলাকা দখলে নেয় রুশ বাহিনী। নিয়ন্ত্রিত ওইসব এলাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চার অঞ্চলে (পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিঝিয়া ও খেরসন) গত মাসের শেষের দিকে গণভোট আয়োজন করা হয়। এরপর অঞ্চলগুলো নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
গণভোটের পর ইউক্রেনের ওই চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। গত ৩ অক্টোবর একীভূতকরণ সম্পর্কিত একটি চুক্তি রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট ডুমায় অনুমোদন পায়। এরপর ৪ অক্টোবর চুক্তিটিকে অনুমোদন দেয় রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিল। এরপর ৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত আইনে সই করেন পুতিন। এর মধ্যদিয়ে ওই চার অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এদিকে পুতিনের এ পদক্ষেপকে ‘অবৈধ ও প্রহসন’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানায় ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো। ওই চার অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করার পর ইউক্রেনে সংঘাত আরো জোরদার হয়।
এলাকাগুলো পুনর্দখলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইউক্রেনীয় সেনারা। অন্যদিকে অধিকৃত এলাকাগুলো ধরে রাখতে অভিযান জোরদার করে রুশ বাহিনী। এই মুহূর্তে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী খেরসনে উভয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যে খেরসনসহ অধিকৃত ওই চার অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করলেন পুতিন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বুধবার (১৯ অক্টোবর) সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক সভায় বক্তব্য দিয়ে ওই চার অঞ্চলে মার্শাল ল জারির পাশাপাশি চলমান অভিযান সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুতসিনের তত্ত্বাবধানে ওই অঞ্চলগুলোতে একটি বিশেষ সমন্বয়ক কাউন্সিল গড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে খেরসনের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনে নিযুক্ত রাশিয়ার নতুন কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বলেছেন, খেরসনের পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাকর। এরই মধ্যে শহরটি থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে।
খেরসনে রাশিয়ার নিয়োগ করা কর্মকর্তা ভ্লাদিমির সালদো জানিয়েছেন, ইউক্রেন হামলা শুরুর আগে খেরসন থেকে হাজার হাজার বেসামরিক লোক সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছেন তারা।
বুধবার এক বিবৃতিতে ভ্লাদিমির সালদো বলেন, দেনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরের চারটি শহর থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। রাশিয়ার সব কর্মকর্তাও নদী পার হয়ে যাবেন।
রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলোতে দেখানো হয়েছে, অনেক মানুষ দেনিপ্রোর কাছে জড়ো হয়েছেন। তারা নৌকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে এটি নিশ্চিত নয় কতজন নদী পার হচ্ছেন।