প্রায় ৪০ বছর আগের কথা; তেলের মিলে কাজ করছিলেন আলমগীর ব্যাপারী। হঠাৎ মেশিনে ঢুকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার একটি হাত। প্রথম কদিন বিছানায় থাকলেও সুস্থ হয়ে ফের নামতে হয় জীবন সংগ্রামে। জীবিকার তাগিদে এক হাত দিয়েই ধরেন অটোরিকশার স্টিয়ারিং। চলতে থাকেন দিগ্বিদিক। এভাবেই জীবনবাজি রেখে তিন-চারজনের খাবার জোগাড় করছেন সংগ্রামে হার মানা আলমগীর।
৬৫ বছর বয়সী আলমগীরের বাড়ি মাদারীপুর পৌরসভার কুলপদ্বি এলাকায়। প্রায় ৪০ বছর আগে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় একটি হাত হারালেও থেমে নেই আলমগীরের জীবন সংগ্রাম। এক হাত দিয়েই টেনে চলছেন সংসারের ঘানি। বেঁচে থাকার তাগিদে সব বাধাবিপত্তিকে পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছেন অটোরিকশা।
বর্তমানে বয়সের ভারে কমে গেছে আলমগীরের শক্তি। এখন স্বাভাবিকভাবে চলতেও কষ্ট হয় তার। কিন্তু এ বয়সেও থেমে নেই আলমগীর। অটোরিকশা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আলমগীর ব্যাপারীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। মেয়েদের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। খোঁজ নেন না মা-বাবার। তাই বৃদ্ধ স্ত্রী ও এক মেয়ের জন্য অটোরিকশা চালাচ্ছেন এক হাত হারানো আলমগীর।
১৯৮২ সালে মাদারীপুর পুরান বাজার পরাণ দাসের তেলের মিলে কাজ করতেন আলমগীর। ওই সময় অসাবধানতাবশত মেশিনে হাত ঢুকে যায়। পরে তার একটি হাত কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে অটোরিকশা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বসে নেই আলমগীর। এক হাত দিয়ে চালান অটোরিকশা। এক হাতে চালানো দেখে অনেকেই তার অটোরিকশায় ওঠেন না।
আলমগীর বলেন, সংসারের ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত আমি। কিন্তু কিছুই করার নেই। সংসারে তিন-চারটি মুখের খাবার আমাকেই প্রতিদিন জোগাড় করতে হয়। এক হাত দিয়ে অটোরিকশা চালাতে আর পারছি না। একা একা কান্না করি। কিন্তু এ কান্না দেখার কেউ নেই। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে দাবি জানাই তারা যেন আমাকে একটি দোকান বা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে অটোচালক আলমগীরের স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, আমার স্বামীর হাত চলে যাওয়ার কারণে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এখন বয়স বাড়ায় অটোরিকশা চালাতেও কষ্ট হয়। সরকার আমাদের কিছু ব্যবস্থা করে দিলে উপকার হতো।
স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজী ওবায়দুর রহমান বলেন, জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রতিদিন অটোরিকশা চালন আলমগীর। এক হাত দিয়ে চালাতে পারেন না বলে অনেকেই অটোরিকশায় উঠতে চান না। তার সব মিলিয়ে দিনে আয় ২০০-২৫০ টাকা। এ সামান্য উপার্জন দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে তার। কোনো কোনো দিন না খেয়েও থাকতে হয় তাদের।
আরেক অটোচালক রশিদ হাওলাদার বলেন, আমরা দুই হাত দিয়ে অটোরিকশা চালিয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। আর আলমগীর কীভাবে এক হাত দিয়ে অটোরিকশা চালান, তা দেখে অনেক খারাপ লাগে।
মাদারীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ব্যাপারী বলেন, অটোচালক আলমগীর ব্যাপারীকে আমাদের পৌরসভার থেকে সহযোগিতা করা হবে।