জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর বিষয়ে সরকার নতুন কোনো পরিকল্পনা করেছে কি না, তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মাত্র চার মাস অগেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সেপ্টেম্বরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের গড় মুনাফার হার ১১ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা এ খাত থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার বিষয়টি এখন অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠতে পারে যদি দেশে ভবিষ্যতে আইএমএফের ঋণগুলোর সঙ্গে ট্যাগ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আইএমএফের ইচ্ছা অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানো কঠিন বলে মনে হচ্ছে। তবে, আমরা আশা করি, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে জনগণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।’
বাংলাদেশ সফররত আইএমএফের আর্টিকেল ফোর মিশন পরবর্তী জাতীয় বাজেটের কিছু দিক সম্পর্কে জানতে অর্থ বিভাগের বাজেট শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় তারা সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে জানতে চায়। গত কয়েক দিনে ওই টিম অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
আইএমএফের সহকারী পরিচালক রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ‘আর্টিকেল ফোর মিশন’ নামে পরিচিত প্রতিনিধিদলটি দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে এসেছে। তাদের সফর শেষ হবে ১৯ ডিসেম্বর।
সাধারণত, আর্টিকেল ফোর মিশন কঠোর যোগ্যতার মানদণ্ডের পরামর্শ দেয়। তারা জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরতা কমানো, আর্থিক মধ্যস্থতাকে শক্তিশালী করা এবং পুঁজিবাজার প্রসারিত করার জন্য বাজারভিত্তিক মূল্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে সরকারের উচিত তাদের শর্তগুলো ভালো করে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া। আইএমএফ যদি বাংলাদেশের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার আরও কমানোর প্রস্তাব করে, তাহলে সরকারকে ফান্ডের প্রস্তাবের ভালো-মন্দ যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
ইতোমধ্যেই সঞ্চয়পত্রের ওপর মুনাফার হার কমানোর প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। কারণ, এ বছরের অক্টোবরে এক মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রয় ৭৩ শতাংশ কমেছে।
চলতি বছর বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।