প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে দায়ের করা মামলার জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার (২৩ মে) ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন বেলা ১২ টা ৫২ মিনিটে জামিনের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। পৌনে ২ টার দিকে মামলার শুনানি শেষ হয়। এরপর আদালত আদেশ অপেক্ষমান রাখেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের দিন রোববার ধার্য করেন।
এদিন রোজিনা ইসলামের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, আমিনুল গণি টিটো প্রমুখ আইনজীবী জামিন শুনানি করেন।
শুনানিতে এহেসানুল হক সমাজী বলেন যে, এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ এজাহার। রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে কি ডকুমেন্টস জব্দ করা হয়েছে তার কোনো বর্ণনা নেই এজাহারে। তার কাছ থেকে কোনো ডকুমেন্টস উদ্ধার বা জব্দ করা হয় নাই। এজাহারে বলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। কিন্তু তার কোনো বর্ণনা দেওয়া নাই। তাই অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯২৩ সালের ৩ ধারা এ ঘটনার সঙ্গে যায় না। এটা একটি জামিনযোগ্য মামলা। তিনি একজন নারী, অসুস্থ মহিলা। তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক। তিনি জামিনের কোনো অপব্যবহার করবেন না।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি সাজানো, মিথ্যা এবং বানোয়াট। বিগত ৫০ বছরের মধ্যে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয় নাই।
আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো বলেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখালেখি ও ভ্যাকসিনের বিষয়ে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার কারণে তাকে শত্রু মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সব কর্মকর্তারা। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত না। তাই যেকোনো শর্তে রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করা হোক।
ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে কি ডকুমেন্টস উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়ে যাদের কোনো অভিজ্ঞতাই নাই। যাই হোক তিনি অসুস্থ, তাই বিশেষভাবে অনুরোধ করছি তার জামিন বিবেচনা করার জন্য ।
রাষ্ট্রপক্ষে হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ, তাপস কুমার পালসহ কয়েকজন আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশের দিন রোববার ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে রোজিনা ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে জামিন আবেদনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন আদালত।
উল্লেখ্য, ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়।