আমাদের দেশে পেঁয়াজ একটি আমদানি নির্ভর শস্য। প্রায় প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা হয়। আমদানি নির্ভর হওয়ার কারণে প্রতিবছরই একটি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে পেঁয়াজের কৃত্তিম সংকট তৈরি করা হয়। একারণে পেঁয়াজের মূল্য উর্ধ্বমূখী হয়ে যায়, তখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৫লক্ষ্য ৮৩হাজার ৩শত ৫০ জন, মাথাপিছু দৈনিক পেঁয়াজের চাহিদা ০.৩৫ গ্রাম। এই উপজেলায় বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা ৭ হাজার ৩৪৫ মেঃ টন। এই বিপুল পরিমাণ পেয়াজের চাহিদা এতোদিন অনেক অংশে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হতো। তবে শাহজাদপুর কৃষি অফিসের বিভিন্ন প্রণোদনা এবং পরামর্শের ফলে ¯’ানীয়ভাবে পেয়াজ উৎপাদনে ঝুকছেন কৃষকরা। গত বাছর একশ ২৫ হেক্টর জমিতে বারি-১ পেয়াজ চাষ করে ১২শো ৫০ মেঃ টন পেঁয়াজের ¯’ানীয় চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পেয়াজ চাষ করার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের খামার সানিলা গ্রামের পেঁয়াজচাষী মো. ইয়াকুব আলী জানান, ধানের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় পেঁয়াজ আবাদের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়েছে। তাদের দেখে উপজেলার গাড়াদহ, নারিনা ও হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু ¯’ানেও চাষীরা এবার পিয়াজের আবাদ করেছেন। হেক্টর প্রতি ১০ টন পিয়াজ উৎপাদন হবে যা বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে পিয়াজ চাষীরা আশা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৬০-৭০ মন যা হেক্টর প্রতি দাড়ায় ১০ মেঃ টনের বেশী। পেঁয়াজ চাষীরা আরও জানান, ধান আবাদে বিঘাপ্রতি প্রায় ১২ হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় ও উৎপাদিত ধান বিক্রি করে প্রায় ১৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এতে ধানের আবাদে বিঘাপ্রতি কৃষকের প্রায় ৬ হাজার টাকা লাভ হয়। কিš‘ পেঁয়াজ আবাদে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় হলেও ১২০ থেকে ১৩৫ দিনে উৎপাদিত পিয়াজ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এতে বিঘাপ্রতি তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। তারা জানান, আরো বেশি পরিমাণ কৃষককে উদ্বদ্ধ ও সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হলে আরো বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব। পোতাজিয়া ইউনিয়নের নুকালী ব্লকের বড়বায়ড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন জানান, গতবছর কৃষি অফিস থেকে ১০৩ কেজি পেঁয়াজের ভাল্ব নিয়ে আমি পেঁয়াজের চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজ চাষে আমি অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশী লাভবান হয়েছি। আমি অন্যান্য কৃষকদের আমার উপৎপাদিত পেয়াজের ভাল্ব স্বল্প মূল্যে সরবারাহ করছি। শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আব্দুস সালাম জানান, পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল, মসলা বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মাঝে ২৪শত কেজি পেয়াজের ভাল্ব ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার বিতরণ করা হয়েছে। উপ সহকারী কৃষি অফিসারাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সকল প্রকার সহযোগীতা করে যা”েছ। অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজের চাষ অত্যান্ত লাভজনক তাই অনেক কৃষকই পেঁয়াজ চাষে ঝুকছেন। আশা করা যা”েছ খুব শীঘ্রই শাহজাদপুর থেকে উৎপাদিত পেয়াজ দিয়ে ¯’ানীয় চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হবে।