নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুধু এবার নয়, জনগণের ভোট ও সমর্থন নিয়ে আমার নেতৃত্বে এ নিয়ে চারবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে বলেই জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছে এবং আমাদের দল সরকারে আছে। শুধু তাই নয়, ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, ২১ আগস্ট, ২০০১ পরবর্তী অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের পরও আওয়ামী লীগ টিকে আছে শুধু জনগণের সমর্থনেই।’ জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি ও মানুষ হত্যা করে, দেশের কল্যাণ করতে পারে না, তাদের মানুষ ভোট দেয় না। এরা বিভিন্ন সময়ে নানা উপায়ে সরকারে এলেও টিকে থাকতে পারেনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসী, খুনিচক্র ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বসে নেই। এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের ঘটনা ঘটিয়েও তারা ক্ষমতা ভোগ করতে পারেনি জনগণের কারণে। এটাই তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ। তারা ক্ষমতায় থেকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি ও মানুষ হত্যা করেছে, দেশের কল্যাণ করতে পারেনি। এসব অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে যে দলের জন্ম, তাদের দেশের জনগণ কেন ভোট দেবে?’আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কারোর দয়া বা দাক্ষিণ্যে নয়, আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থন নিয়েই চার চারবার ক্ষমতায় থেকে দেশের সেবা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে বলেই ক্ষমতায় টিকে আছে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের একটি শ্রেণি আছে, তাদের কাজই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে জিয়া, এরশাদ এবং এরপরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছে। জিয়া-এরশাদ কীভাবে ক্ষমতায় এসেছিল বা পরবর্তীতে খালেদা জিয়া? এদের মূল লক্ষ্যই ছিল দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুন ও সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছে।’তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচন কেমন ছিল? ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ভোটে হারেনি, ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছিল। আর খালেদা জিয়া এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে তালিকা করেছিল।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে হয়তো ভুলে যান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে শুধু ভোট চুরির অপরাধেই খালেদা জিয়াকে দেশের জনগণ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করিয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিল। বাংলাভাই-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। ‘৯১ সালেও জামায়াতের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছিল খালেদা জিয়া। ভোট চুরির কারণেই দেশের জনগণ ‘৯৬ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে ভোট দেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে, দেশের উন্নতি হয়, দেশ এগিয়ে যায়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বলেই জনগণ বারবার নির্বাচনে আমাদের সমর্থন দিয়েছে।’তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের অনেক চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র হয়েছে। জনসমর্থন না থাকলে ষড়যন্ত্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটানো যায়, কিন্তু ক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকা যায় না। তাই আওয়ামী লীগকে নিয়ে যত বেশি নাড়াচাড়া কিংবা ষড়যন্ত্র করা হবে, আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের শিকড় আরও বেশি শক্তিশালী হবে—এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। জনগণের সমর্থন নিয়েই প্রতিবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের মঙ্গলে ও কল্যাণে কাজ করেছে, যার শুভ ফলও জনগণ পাচ্ছে। এত অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের পরও আওয়ামী লীগ টিকে আছে শুধু জনগণের সমর্থনেই।সরকার প্রধান বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল কখনোই দেশ ও জাতির কল্যাণ করতে পারে না। ক্ষমতাকে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার কাজে ব্যবহার করে, জনগণ কিছু পায় না। আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যেটি দেশের মাটি ও মানুষের মধ্যে থেকে দেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়, দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আমরা তা প্রমাণ করেছি।’বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারও খালেদা জিয়ার হাতেই তৈরি। প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদকে খালেদা জিয়াই নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানিয়েছিল। ৯ সিনিয়র জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে মঈন উ আহমদকে সেনাপ্রধানও করেছিলেন এই খালেদা জিয়া। আর এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর ডেইলি স্টারের সম্পাদককে নিয়ে নতুন দল গঠনের চেষ্টা করা হলেও জনগণ তাতে সমর্থন দেয়নি। আরেকজন যিনি মারা গেছেন (ফেরদৌস আহমেদ কোরাইশি), তাকে নিয়ে কিছু বলতে চাই না, তাকে দিয়েও কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেখানেও জনগণ কোনও সাড়া দেয়নি। ওই সরকার কিন্তু প্রথমেই আমাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ আন্তর্জাতিক চাপে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। দেশের জনগণ বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে। এরপর একটার পর একটা প্রতিটি নির্বাচনে জনগণের ভোট নিয়েই আমরা তাদের সেবা করে যাচ্ছি।’আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই বেসরকারি টেলিভিশনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। গণতান্ত্রিকভাবে তৃণমূল থেকেই আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছে, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এ দেশের স্বাধীনতা এসেছে। শহীদের তালিকা দেখেন, দেশের জন্য একটি দল (আওয়ামী লীগের) হিসেবে এত জীবন অন্য কেউ দেয়নি।’বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।