করোনায় সব সেক্টরই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে বস্ত্র খাতে করোনার অভিঘাত অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় মারাত্মক।
জানা যায়, করোনা মহামারীর কারণে এ খাতে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। সরকারি আদেশে উৎপাদন বন্ধ ও ব্যাহত হওয়ায় দেশীয় বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
পরে সরকারি আদেশে বস্ত্রকলগুলো ক্রমান্বয়ে চালু হলেও সম্পূর্ণ উৎপাদনের ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারায় এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
করোনায় ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৯০ কোটি ডলার। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজনে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্টের মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন নির্ধারণ করেছিল, যা বহাল ছিল গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
কিন্তু শিল্প খাতে করোনার বিরূপ প্রভাব অব্যাহত থাকায় এ সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির বিলম্ব মূল্য পরিশোধে আরও ছয় মাস সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা তাদের এ প্রত্যাশাকে যৌক্তিক বলে মনে করি।
বস্তুত, করোনায় সুতা উৎপাদন, বস্ত্র তৈরি এবং কাপড় প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধের সুবিধার্থে এটুকু সুবিধা প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে ঝুঁকির মাত্রাও বেশি।
আর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শক্তিশালী করার স্বার্থে সবার আগে টেক্সটাইল খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। এ খাতে বিনিয়োগও প্রচুর। জানা যায়, দেশে প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা, দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, দেশীয় শিল্প রক্ষার স্বার্থে সরকারের উচিত বস্ত্র ও সুতা খাতে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা।
দেশের সুতা উৎপাদনের খাতটি দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে জর্জরিত। অথচ এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। দেশে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে চারশ’র মতো সুতার মিল রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সামগ্রিক বস্ত্র খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুর্ভাগ্যজনক, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও গত ৩০ বছরেও এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া হয়নি। যেখানে বিনিয়োগ কম, সেখানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশি। ফলে সুতা ও কাপড়ের মিলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পড়েছে ঝুঁকির মুখে।
আমরা আশা করব, বস্ত্র খাতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব জোরেশোরে পড়ার আগেই নীতিনির্ধারকরা এ খাতকে রক্ষার পদক্ষেপ নেবেন। এর অংশ হিসেবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল আমদানির বিলম্ব মূল্য পরিশোধের সুযোগ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, এটাই কাম্য।