টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া উপকূলে সৃজিত ঝাউবাগান সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঢেউয়ের আঘাতে গত দুই সপ্তাহে শীলখালী ঝাউবাগানের ৪ হাজারের বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে।এতে হুমকির মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ। তবে এখনিই বাগান রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও গ্রামগুলো সমুদ্রভাঙণে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের এক পাশে সমুদ্রসৈকত ঘেঁষা ঝাউবাগান। শীলখালী নামক বিজিবির তল্লাশিচৌকির পশ্চিমে জোয়ারের পানির ঢেউয়ের আঘাত করছে ঝাউবাগানে।উপড়ে পড়ছে ছোট-বড় গাছ।কিছু কিছু গাছ ভেসে যাচ্ছে সাগরে।আবার কিছু সৈকতপড়ে আটকা পড়ে আছে।কোনো কোনো স্থানে উপড়েপড়া ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও কিশোরের দল।এসব গাছ তাঁরা ব্যবহার করবেন নৌকা, জালের খুঁটি ও জ্বালানি হিসেবে।উপজেলার ৩১কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অধিকাংশ স্থানে ঝাউবাগান রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন,বনবিভাগের কর্মকর্তা-কমচারীর সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগসাজসে মাধ্যম উপড়েপড়া গাছ সংগ্রহ করে কিছু নিধারিত লোকজন।প্রতিটি গাছ তাঁরা ৩০-৫০টাকায় কিনে নিচ্ছেন।এ ব্যাপারে বনবিভাগের নীরবতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।বনবিভাগ গাছগুলো মজুত করে নিলামের ব্যবস্থা নিলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পেত বলে মন্তব্যও করেছেন স্থানীয়রা। উপকূলীয় বনবিভাগ জানায়, ১৯৯১ ও ৯৪ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরবতীতে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা ভাঙ্গণ রক্ষাথে বাহারছড়ার জাহাজপুরা, শীলখালী ও চৌকিদারপাড়ায় ৬৪ হেক্টর সমুদ্রসৈকতে ২০০৭-৮ ও ২০১৫-১৬ সালে ১ লাখ ৬০হাজার ঝাউগাছের রোপণ করেন।এ তিনটি বাগানের পরিচষার দায়িত্বে রয়েছে উপকূলীয় বনবিভাগ। তবে ওই এলাকায় আরও একাধিক বাগান থাকলেও সেগুলো বনবিভাগের দায়িত্বে রয়েছে।এরমধ্যে শীলখালীর বাগানটি জোয়ারের আঘাতে বিলীন হতে চলছে।এ বাগানে ৪ হেক্টর ভূমিতে ১০হাজার গাছ রোপন করা হলেও গত দুই সপ্তাহে ৪হাজারের বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে। বাহারছড়ার ইউপির চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন জানান,ঢেউয়ের বিশাল ঝাউবাগানে প্রতিনিয়ত জোয়ারে আঘাত হানছে এবং বাগান উজাড় হচ্ছে।কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে উপড়েপড়া গাছগুলো অবৈধভাবে বিক্রয় করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।এতে করে ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।পাশাপাশি সৈকতের বালুর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যেকোনো সময় পুরো এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শমা দীপু বলেন, ঝাউবাগন উপড়েপড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। জানতে চাইলে উপকূলীয় বনবিভাগ টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা অসীম বাড়ৈ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পর থেকে সৈকতের বালুর বাঁধ ভেঙে ঝাউবাগানে জোয়ারের পানি আঘাত করছে। প্রতিদিন জোয়ারে গাছ উপড়ে পড়ছে।জরুরী ভিক্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রামগুলো সমুদ্রভাঙণে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন,পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় গাছগুলো নিয়মিত পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে তা চুরি হয়ে যাচ্ছে।বাগান রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহিত করা হয়েছে।