‘আমার বুকের ধন নিরাপরাধ ছেলে মামুনসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের যারা প্রকাশ্য জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে, অবিলম্বে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক, এটা আমার এ মুহূর্তের একমাত্র দাবি। এর বেশি কিছু আর চাই না। ষোল বছর ধরে অপেক্ষা করছি বিচার পাওয়ার আশায়। বুকের মধ্যে শোকের পাথর বয়ে বেড়াচ্ছি। আদালতের বিচার ও রায় হয়েছে। এখন সেই রায় কার্যকর চাই। নিজ চোখে হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই। এর মধ্য দিয়ে মামুনের আত্মার শান্তি চাই।’
২০০৪ সালের একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুন মৃধার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ বাবা মোতালেব মৃধা শুক্রবার বৃষ্টিভেজা সকালে দৃঢ় কণ্ঠে এ দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, একমাত্র ছেলেকে হারানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং কিছু দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নাই। তাঁর ঋণ শোধ করা যাবে না। এখন কেবলমাত্র ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর চাই। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম আলীপুরা গ্রামের মোতালেব মৃধার ছেলে মামুন মৃধা ঢাকার কবি নজরুল সরকারী কলেজে অনার্সের ছাত্র ছিলেন। তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। ছাত্রলীগ কর্মী মামুন মৃধা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য সামনে থেকে শুনতে ওইদিন জনসভায় গিয়েছিলেন। গ্রেনেড হামলায় অন্যদের সঙ্গে তিনিও নিহত হন। হত্যা বার্ষিকীর দিনে নিহত মামুন মৃধার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে কাছে পেয়ে নিহত মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি আমার এ দাবি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেবেন। হত্যাকারীদের ফাঁসি হলেই কেবল আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। আমার পরিবার শান্তনা পাবে।’ ওই সময় আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন মোতালেব মৃধাকে আশ্বস্ত করে বলেন,‘ জননেত্রী নিরলসভাবে অনেক কিছু করার চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় শিগগির পৈচাশিক এ হত্যাকান্ডের রায় কার্যকর হবে। জননেত্রী আগেও যেমন আপনাদের পাশে ছিলেন, আগামিতেও তিনি আপনাদের পাশে থাকবেন।’ গলাচিপা ও দশমিনা এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুন মৃধার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় মামুন মৃধার আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়। আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন পরে মামুন মৃধার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ একান্তে কথা বলেন।