হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: সিটি ব্যাংক লিমিটেডের সাথে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে একটি নতুন রিসার্স ইউনিট তৈরীতে ১ কোটি টাকার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করবে সিটি ব্যাংক।
রবিবার (১৪ মে) ঢাকায় সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মাঝে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন হাবিপ্রবি’র রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (আইআরটি) পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. এম. হারুন-অর-রশীদ এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক. ড. এম. কামরুজ্জামান, হাবিপ্রবির মলিকুলার বায়োলজি ইউনিটের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াছিন প্রধান, সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ এবং মাহবুবুর রহমান, হেড অব কমার্শিয়াল ব্যাংকিং মাহমুদ গনী, চীফ ইকোনমিস্ট আশানুর রহমান ও হেড অব ব্রান্ড এন্ড কমিউনিকেশন শাহরিয়ার জামিল খান।
উচ্চশিক্ষায় কৃষি গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন গবেষণা সামগ্রী সংযোজনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে এ নতুন ইউনিট স্থাপিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
এই চুক্তির অধীনে, “ডিজিস ডায়াগনস্টিক ইউনিট” (Disease Diagnostic Unit) নামে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে নতুন একটি রিসার্চ ইউনিট চালু হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ, ফিসারিজ অনুষদ, ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদসহ অন্যান্য অনুষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্র-শিক্ষক ও অন্যান্য গবেষকগণ গবেষনা সেবা পাবেন। ফলে ফসল, মাছ, ও অন্যান্য প্রানীর নতুন রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে, ট্রান্সবাউন্ডারী ডিজিস সনাক্ত করা যাবে, এই ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা যাবে। তাছাড়া গবেষকগন বিশ্বমানের গবেষনা করে মানসম্মত সায়েন্টিফিক পেপার প্রকাশ করতে পারবেন। এই ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গবেষনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে যা উত্তরবঙ্গের কৃষি উন্নয়নে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে কেন্দ্রীয় গবেষনাগারে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যে সেখানে মলিকুলার বায়োলজি ইউনিট তৈরী করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গবেষনাগারে ফসল, মাছ, ও অন্যান্য প্রানীর জীবানুর জীবন রহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকুয়েন্সিং), করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া খাদ্যে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পৃথকীকরণ ও বিশুদ্ধকরণ, খাদ্যশস্যে উপস্থিত বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন: আর্সেনিক, সিসা ইত্যাদির ঘনমাত্রা নির্ণয় করার সুযোগ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই ল্যাবে বিশ্বমানের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আরও গবেষণার সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআরটি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. এম. হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘ আমরা আশা করছি এসব সামগ্রী স্থাপিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে সমৃদ্ধ গবেষণা করতে পারবে, পাশাপাশি অত্র এলাকার প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবেন।’
মলিকিউলার বায়োলজি ইউনিটের ইনচার্জ ড. মো. ইয়াছিন প্রধান বলেন, মাননীয় উপাচার্য স্যার এবিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উপাচার্য স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডিজিস ডায়াগনস্টিক ইউনিট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সিটি ব্যাংক তাদের ‘করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসেবলিটি’ অনুদানের অধীনে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে ১ কোটি টাকার গবেষণা সামগ্রী সরবরাহ করবে।’
প্রসঙ্গত, গতবছরের ১৩ই মার্চ হাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় গবেষণাগার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অত্যাধুনিক এই গবেষণাগারে রয়েছে ডিএনএ ও আরএনএ এক্সট্রাকশন রুম, জেল ডকুমেন্টেশন রুম, পিসিআর ও আরটি-পিসিআর রুম, রেফ্রিজারেটর (-১৮ ডিগ্রি সে.), বায়োসেফটি ক্যাবিনেট লেভেল-২, ন্যানো ড্রপ, এএএস, এইচপিএলসি, জিনোম সিকুয়েন্সিং রুমের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।