মঙ্গলবার ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানে একটি ৭ তলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় শতাধিক মানুষ। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- বাসযাত্রী, পথচারী, বেসরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের মূল কারণ জানা যায়নি। আর কত তলা থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে সেই সঠিক তথ্যও জানা সম্ভব হয়নি। এর আগে গত রোববার (৫ মার্চ) রাজধানী ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের এই ঘটনাটি দুর্ঘটনা ছিলো বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেছেন, সম্ভবত দীর্ঘদিন জমে থাকা গ্যাস থেকে এ বিস্ফোরণ হয়েছে। একই দিনে (৫ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটের দিকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫ শ ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। তার আগে শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্টিল কারখানায় অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিষ্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৬ জনের মুত্যৃ হয় এবং আহত হয় ৩০ জনের বেশি। দগ্ধ হয়েছেন আরও অনেকেই। এরও আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় নান্নু স্পিনিং মিলে আগুন লাগে। খবর পেয়ে সেখানে যায় ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট। পরে ধারাবাহিকভাবে সেখানে মোট ৯টি ইউনিট কাজ করেছে। অন্যদিকে একই সময় আড়াইহাজারের এসপি কেমিক্যালে আগুনের খবর আসে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে। সেখানে অগ্নিনির্বাপণে কাজ করেছে ১১টি ইউনিট। ওই দিনই মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি থানার দেউলিয়াবাড়ি এলাকায় ঝুট গুদামে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা প্রায় এক ঘণ্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা জানা যায়নি। তার আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে একটি ১২ তলা আবাসিক ভবনে আগুন লাগে। এ ঘটনায় একজনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে ধারাবাহিক ভাবে। ফলে সঙ্গত কারণেই জনমনে প্রশ্ন উঠছে যে, এসব ঘটনা কি শুধুই নিছক দূর্ঘটনা নাকি নাশকতা। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এগুলোকে দূর্ঘটনা বলে বলা হয়েছে। কিন্তু একের পর এক এ ধরনের ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের সব ঘটনাকে দূর্ঘটনা বলতে নারাজ সচেতন মহলের একটি বড় অংশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোডে পথচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তারা এ আশংকার কথা জানান। বাবর রোড নিবাসী জহিরুল হক, এনায়েত উল্লাহ, মো. মতিউর রহমান, শিক্ষক সরিফুদ্দিন, ব্যাংক কর্মকর্তা রনি তালুকদার বলেন, সব অগ্নিকাণ্ড হয়তো নাশকতা নয় এটা ঠিক আবার সব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকেও দূর্ঘটনা বলা যাবে না। বিশেষ করে কিছু কিছু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতারই আলামত দিচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিক ভাবে বিষ্ফোরণের ঘটনা নানা প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। কারণ ঘটনাগুলোর ধরন একই রকম। যদিও এখনও নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে নাশকতা নয় সেটিও সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এসব অগ্নিকাণ্ড নিছক দূর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা সময়ই বলে দেবে। আর এজন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের মর্মান্তিক ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা তা তদন্তের মাধ্যমে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার বিকালের এই ঘটনায় এরই মধ্যে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বুধবার ঘটনাস্থলে যান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন আহমেদ। তিনি এই সময় বলেন, একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। ফলে এগুলো দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। এরই মধ্যে উদ্ধারকাজে অংশ নিতে গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে কাজ করছেন তারা। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধারের জন্য জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন। বুধবার সকালে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। ধারণা করা হচ্ছে, তারা ভবনটির বেজমেন্টে আটকে আছেন। নিখোঁজ চারজন হলেন- বাংলাদেশ স্যানিটারির ম্যানেজার মেহেদী হাসান স্বপন, আনীকা স্যানিটারির মালিক মুমিন উদ্দিন সুমন, কর্মচারী রবিন হোসেন শান্ত ও ইমতিয়াজ। ইমতিয়াজের পরিচয় জানা যায়নি। বুধবার সকাল ৯টার দিকে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে তারা এখনো বেজমেন্টে ঢুকতে পারেনি। ঘটনাস্থলে এখনো রাজউকের ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা আসেননি। বেজমেন্টে ঢুকে উদ্ধারকাজ শুরু করতে না পারায় ক্ষোভ জানিয়েছিলেন নিখোঁজদের স্বজনরা। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের সাততলা ভবনে বিস্ফোরণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভুঁইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট ও সিয়াম (১৮)।