শরীয়তপুরে পিপিসহ জোড়া খুনের মামলায় ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া তিনজনকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রোববার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে ৪ মার্চ এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শহীদ তালুকদার, শফিক কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শাহীন কোতোয়াল, সলেমান সরদার ও মজিবুর তালুকদার। যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা হলেন- সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, বাবুল খান, ডাবলু তালুকদার ও টোকাই রশিদ। তাদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজন হলেন- মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। ১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়।
স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ সমর্থক সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। এতে তার ভাই মন্টু তালুকদার গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে ফের হামলা চালানো হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন খুন হন।
হাবীবুর রহমান তখন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় ৫৫ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেয়। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে। এরপর উচ্চ আদালতে রিট করেন জিন্নাত রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতে এমপি হয়েছিলেন আওরঙ্গ। তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ নিহত হন। এরপর মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে পুলিশকে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। পুলিশ ২০১৩ সালের অক্টোবরে আদালতে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আওরঙ্গ ছাড়াও ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহজাহান মাঝি ও স্বপন কোতোয়াল মারা গেছেন।
শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের পিপি মীর্জা মো. হজরত আলী বলেন, দুই ঘণ্টা যুক্তিতর্কের পর এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। মামলাটি ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়। মামলায় বাদীপক্ষের ২৮ জন ও আসামিপক্ষের ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ৫২ জন আসামির মধ্যে ২৬ জন কারাগারে, ১৩ জন জামিনে ও ১৩ জন পলাতক রয়েছেন। এ রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
হাবীবুর রহমানের ছেলে জজ আদালতের এপিপি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, আমার বাবা ও চাচাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি।