স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রসূতির পেটের ভেতরে গজ রেখে যে সেলাই করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্তের রিপোর্টের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতীতে স্বাস্থ্যখাতে যত নৈরাজ্য ছিল এখন আর সেটা নাই। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, যত অনিয়ম দুর্নীতি আছে স্বাস্থ্যখাত থেকে সেগুলো মুক্ত করতে হবে।’
শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইলে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে কামরুন নাহার রিমি নামের এক প্রসূতি গত ৩১ জানুয়ারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গেলে তাকে সেদিনই ভর্তি হতে বলা হয়। ওইদিন রিমিকে গাইনি বিভাগের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। সেদিনই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ডা. নিসফুন নাহারের পরামর্শে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হয় তার। একইসঙ্গে নেওয়া হয় সিজারের প্রস্তুতি। ওইদিন ডা. নিসফুন নাহার, প্রধান সার্জন হিসেবে ডা. অপু সাহা ও ডা. আবেদা তার সিজার করান। ছেলে সন্তান জন্ম দেয় রিমি। পরের দিন থেকেই রিমির পেটে ব্যথা শুরু হয়। দিন দিন ব্যথা আরও বৃদ্ধি পায়। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সন্দেহে এ হাসপাতালেই ২২দিন চলে চিকিৎসা। অবস্থার অবনতি হলে কামরুন নাহার রিমিকে ঢাকায় নেওয়া হয়। গত ১ মার্চ ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিটি স্ক্যানে পেটের ভেতর অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়ে। এরপর ওই হাসপাতালে ৩ মার্চ অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার করে তার পেট থেকে প্রায় এক ফুট লম্বা গজ কাপড় বের করে চিকিৎসকরা। পেটের ভেতর গজ কাপড় থাকায় নাড়ীতে পচন দেখা দিলে বেশ কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। বিষয়টি নিয়ে এখন বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কামরুন নাহার রিমি বলেন, ‘যখন ইনফেকশন হয়েছিল, তখন টাঙ্গাইাল জেনারেল হাসপাতালের ওটিতে প্রত্যেকদিন ড্রেসিং করতো। তাদের প্রত্যেকদিন বলেছি ব্যথার কথা। কেনো ব্যথা হচ্ছে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলতো গ্যাস্ট্রিকের কারণে ব্যথা হচ্ছে। আমার সন্তানকে এখনও কোলে নিতে পারিনি।’
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম সজীব বলেন, ‘এ ঘটনায় ইতোমধ্যে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে আমাকেও রাখা হয়েছে। এছাড়াও মেডিসিন বিভাগ, সার্জারি বিভাগ ও গাইনি বিভাগের একজন রয়েছে। এ কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
এদিকে হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মান্নানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- টাঙ্গাইল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি খন্দকার সাদে-কুর রহমান, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি, টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।