আজ ১০ ডিসেম্বর। ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই জয়বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় ময়মনসিংহ। মুক্ত আকাশে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন মুক্তিকামী জনতা।জয়বাংলার উচ্চারণ ধ্বনিত হয় সবার কণ্ঠে। বিজয় আনন্দে মেতে উঠে ময়মনসিংহবাসী।এ দিন মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাকসেনাদের কবল থেকে ময়মনসিংহকে মুক্ত করেন।১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ময়মনসিংহবাসীও জীবনবাজী রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ২৭ মার্চ শহরের খাগডহর এলাকার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প ঘেরাও করে।ক্যাম্পে থাকা ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন।দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টার যুদ্ধে পাক বাহিনীর ১২১ সদস্য নিহত হয় ও ১৭ জন আত্মসমর্পণ করে।

শহীদ হন সাত মুক্তিযোদ্ধা। এরপর ময়মনসিংহ জেলায় মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেন।২৯ এপ্রিল সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় পানিহাটা ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের হাতছাড়া হলে হাজার হাজার জনতা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে আশ্রয় নেন ও ইয়ুথ ক্যাম্পের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে এফএফ এবং বিএলএফ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।এ অঞ্চলের যুবকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ঢালু ইয়ুথ ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান। শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন হাতেম আলী তালুকদার।

৩ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের বাঁধা অতিক্রম করে ময়মনসিংহ শহরের অভিমুখে যাত্রা করেন। আগের রাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে মুক্তাগাছা হয়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা।১০ ডিসেম্বর ভোরে মতিউর রহমান ও মিত্রবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার সান সিং বাবাজীর নেতৃত্বে ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা।সবাই জড়ো হন সার্কিট হাউসে। সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা।ময়মনসিংহ মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সদস্য সচিব সেলিম সরকার মুক্তদিবসের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মুজিব শতবার্ষিকীতে সরকারের কাছে আমাদের কোন প্রত্যাশা নেই। তবে শতবার্ষিকীতে ভাস্কর্য তৈরি নিয়ে মৌলবাদীরা যে কটূক্তি করেছে তার আইনি বিচার দাবি করছি। সরকার যদি তাদের আইনের আওতায় না আনেন তাহলে আমরাই তাদের বিচার করতে মাঠে নামবো।