![Daily Nabochatona](https://dailynabochatona.com/wp-content/uploads/2023/01/31BwAd3.png)
বাসার বেলকনিতে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তারে জড়িয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলকার স্কুলছাত্রী ইশরাত জাহান জেনির হাত-পা ও শরীরের অংশ পুড়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে একটি কমিটি করে আগামী দু’মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।একই সঙ্গে জেনির পরিবারকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধান প্রকৌশলী চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।জেনির চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা দাবি করে পরিবারের পক্ষ রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক। তার সঙ্গে ছিলেন সাকিব মাবুদ তানিফ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী সাকিব মাবুদ তানিফ জানান, এর আগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলকার হামজার বাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান জেনির হাত-পা ও শরীরের অংশ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৬ নভেম্বর জেনির মা কাজি প্রিয়া আকতারের পক্ষে রিট করেন তাদের আইনজীবী। সেখানে চিকিৎসা খরচ ও ১২ টি সার্জারি বাবদ এক কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং জেনির লেখা পড়া, বিয়ে এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ কোটি ৩২ লাখ।তিনি আরও জানান, রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধান প্রকৌশলী চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১১ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সুন্নিয়া মাদরাসা সংলগ্ন শ্যামলী আবাসিক এলাকার পশ্চিম ষোলশহর ৯০৬/২-এ এবিসি হাইসের তৃতীয় তলায় বসবাস করতো জেনির পরিবার। চলতি বছরের গত ২৬ মার্চ বিকেল ৩টার দিকে বেলকনিতে পরিত্যক্ত একটি পাইপ সরাতে গিয়ে বেলকনির পাশেই ১১ হাজার বোল্টেজের কারেন্ট লাইনের জড়িয়ে ইসরাত জাহান জেনির (১১) হাতের ডান হাতের কব্জি, বাম হাতের কনুই, বাম পায়ের পুরো পাতা এবং পেটের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এ ছাড়া পেট থেকে বাম উরু পর্যন্ত সম্পূর্ণ পুড়ে জলসে যায়।এর পর মূমূর্ষ ও জলসানো মেয়েকে নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত বার্ন ইউনিটে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর মেয়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ৯ এপ্রিল ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়। জেনির এক হাত ও এক পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে। আর চারটি অপারেশ করা হয়েছে।
সেখানে চিকিৎসা করতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এর পর জেনির চিকিৎসা বাবদ বিভিন্নভাবে মোট ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে দাবি করেন তার পরিবার।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জেনির জলসানো ও পোড়া শরীরে আরও ১০ থেকে ১২টি অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী ও তার পরিবার।এরপর তারা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। একইসঙ্গে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের (ডিসির) কাছে অভিযোগ জমা দেন। আর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।এ ছাড়া তারা মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। যদিও সাহায্যের বিষয়ে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানান জেনির পরিবার।কোনো উপায় না পেয়ে তার পরিবার মেয়ের চিকিৎসা (দুটি প্লাস্টিক সার্জারি), লেখাপড়া, বিয়ে এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন জেনির মা কাজি প্রিয়া আকতার মুক্তা। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।