মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের বাকি আর একদিন। কাল মঙ্গলবার ভোট। শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারে পরিবেশ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিহিংসা, ব্যক্তি আক্রমণ, পরস্পরকে কটাক্ষ, ঘায়েল করার নেতিবাচক রাজনীতির চালও অব্যাহত।
তৃতীয় বিশ্বের কোনো কোনো দেশের মতো মার্কিন রাজনীতিতেও দেশ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা জো বাইডেন কারও হাতেই নিরাপদ নয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগের সারমর্ম করলে এমনটাই দাঁড়ায় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
শনিবার ঝুলন্ত কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে নির্ঘুম প্রচার চালিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। দু’জনই সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় নিজের কর্মকাণ্ড তুলে ধরার চেয়ে অন্যের বিষোদ্গারই করেছেন বেশি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়ার হাতে চলে যাবে।
এদিন পেনসিলভানিয়ায় চারটি সমাবেশ করেন ট্রাম্প। প্রতিটি সমাবেশে বিপুল লোক সমাগম হয়। সেখানে করোনা মহামারীর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। ট্রাম্প বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর তিনি নিজেকে তরুণ মনে করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাইডেন ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশ বিক্রি হয়ে যাবে।
ট্রাম্পের সমাবেশ যতটা উৎসবমুখর, ততটাই অনাড়ম্বর ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের প্রচারণা। সমাবেশ করছেন রয়েসয়ে, কোথাও খুব বেশি উচ্ছ্বাস নেই। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে এক হাত নিতে পিছপা হচ্ছেন না। প্রচারণা শিবিরে ভিড়িয়েছেন হাই প্রোফাইল রাজনীতিক, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে।
শনিবার বাইডেন ওবামাকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন ঝুলন্ত রাজ্য মিশিগানে। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, ট্রাম্পের মতো অস্বাভাবিক মানুষের হাতে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ নয়। তিনি করোনা মহামারীর মধ্যে দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে মাঠে নেমেছেন তার পুরো পরিবার। করোনা কাটিয়ে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো একাই নির্বাচনী সমাবেশ করেন পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে। সেখানে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সত্যিকারের বীর সম্বোধন করে ভোট চান।
স্থানীয় সময় রোববার (বাংলাদেশ সোমবার) ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ও টিফানি এবং ছেলে এরিক ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ায় পৃথক প্রচারণায় অংশ নেবেন। অপরদিকে জো বাইডেনের পুত্র হান্টার বাইডেন অনেকটাই নিশ্চুপ। হান্টারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে রিপাবলিকান শিবির। তাই পিতা বাইডেনকে আরও বেশি বিতর্কের মুখে না ফেলার কৌশল হিসেবে তিনি এক রকম চুপচাপ আছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
শুক্রবার পর্যন্ত নির্বাচনের যে চিত্র সিএনএন তুলে ধরেছে তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে, গাধা প্রতীক নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন এবং হাতি প্রতীকের প্রার্থী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। বাইডেনের ৫৪ শতাংশের বিপরীতে ট্রাম্প ৪২ শতাংশ। প্রথম থেকেই এবং সব জরিপেই বাইডেন টানা এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু তারপরও নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না শেষ হাসিটা কে হাসবে!
বলতে পারছেন না, কারণ সবার স্মৃতিতে রয়েছে ২০১৬ সালের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা। সব জরিপ-বিতর্ক এবং পপুলার ভোটেও অনেক ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও সেবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট না পাওয়ায় ট্রাম্পের কাছে হেরে যান।
এবার জনপ্রিয়তার যাচাইয়ে বাইডেন বরাবর এগিয়ে থাকলেও ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা তা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল এবং ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের শঙ্কা কাটছে না।
উল্লেখ্য, মার্কিন নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজে ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। এর মধ্যে জয় পাওয়ার জন্য পেতে হবে ২৭০ ভোট। এই ২৭০ ভোটেই নির্ধারিত হয়ে যাবে মার্কিন জনগণের ভাগ্য। ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট যিনি পাবেন তিনিই যাবেন হোয়াইট হাউসে।
এদিকে ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা জয়লাভের ব্যাপারে দৃঢ় মনোবলের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। ট্রাম্প স্পষ্টই বলছেন নির্বাচনে তিনিই জিতবেন। তাদের এই মনোবলের উৎস নিয়ে পর্যবেক্ষকরা ব্যাপক বিশ্লেষণ করছেন। তারা দৃষ্টি রেখেছেন ঝুলন্ত স্টেটগুলোর দিকে। বলা হচ্ছে, এই স্টেটগুলো যার বিজয় তার। স্টেটগুলো হচ্ছে, অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন। এগুলোকে বেশ জটিল যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
এই আটটি স্টেটের সম্মিলিত ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ১২৭। এই স্টেটগুলোতে বাইডেন এখনও পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে সর্বশেষ জরিপেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবধান কমে আসছে।