
চলতি বছর দেশ থেকে সাড়ে তিন হাজারের মতো হজযাত্রীর কোটা খালি থাকছে, সেটি সৌদি আরবকে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর নয় দফা বাড়িয়েও হজের কোটা পূরণ করা যায়নি। কোটা ফেরত দেওয়া হলেও তা আগামী হজে প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ‘ই-হজ মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘হজ ও ওমরাহ সহয়িকা প্রকাশনা’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসানসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোটা পূরণ নাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজের নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানোর হবে না। কোটা যতটুকু ফাঁকা আছে ততটুকু সৌদি আরবে ফেরত যাবে। এটা আর পূরণ হবে না। এবার সাড়ে তিন হাজারের মতো হজযাত্রীর কোটা খালি থাকছে, সেটি সৌদি আরবকে ফেরত দেওয়া হবে। আমরা গত বছর ২ হাজার ৪১৫ জনের কোটা সৌদি সরকাররের কাছে চেয়ে নিয়েছিলাম। দুই/তিন হাজার এটা কোনো বিষয় না। হজের পরে আপনারা প্রমাণ পাবেন সারা বিশ্বের অবস্থা কী হয়, আর আমাদের কী অবস্থা। তখন বুঝবেন বাংলাদেশে কী করেছে, এখন মনে হচ্ছে অনেক কিছুই। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ কতজন পাঠিয়েছে আর কতজন খালি থেকেছে তখন বুঝতে পারবেন। আমাদের যত হজযাত্রী যাচ্ছে পার্সেন্টেজ অনুসারে সারা বিশ্বে আমরা সর্বোচ্চ থাকব, এটা নিশ্চিত থাকেন ইনশাল্লাহ। হজের খরচ কমানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই জানিয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, আগামী বছর একটু দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে খরচ কমানো যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা করা হবে। আগামী ২১ মে প্রথম হজ ফ্লাইট শুরু হবে বলেও জানান ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নত হজ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। হজের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, হজযাত্রীদের টিকা ও চিকিৎসা সেবাদান, আবাসন ব্যবস্থার তথ্যাদি, লাগেজ ব্যবস্থাপনা, হারানো হজযাত্রী খুঁজে পাওয়াসহ যাবতীয় সেবা কার্যক্রমে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। হজ এজেন্সিগুলো প্রযুক্তিগত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছে। হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, সেই লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হজযাত্রী এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত অংশীজনদের জন্য হজ পালনসহ ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে ই-হজ মোবাইল অ্যাপ এবং হজ ও ওমরাহ সহায়িকা প্রকাশ করা হয়েছে। এটি স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি চমৎকার উদ্যোগ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ই-হজ মোবাইল অ্যাপটি আজকে পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করা হলো। প্রাথমিকভাবে প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাক নিবন্ধন রিফান্ড আবেদন এই সিস্টেমের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তথ্য এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফলে হজযাত্রীরা এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে ভাউচার তৈরি করতে পারবেন। আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে অনলাইনে প্রাক নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আর্থিক লেনদেন নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে ই-হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সেবাও পর্যায়ক্রমে মোবাইল অ্যাপটিতে সংযুক্ত করা হবে। মোবাইল অ্যাপটিতে ধাপে ধাপে নতুন সেবা যুক্ত করা হবে জানিয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড এই অ্যাপটি তৈরি করেছে। উপস্থিত হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘এবার হজে বেসরকারি কোটা এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। এখন পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার নিবন্ধিত হয়েছেন। কিছু খালি মনে হলেও আসলে, সেখানে খালি নেই। এখন আমাদের গাইড আছে মোনাজ্জেম আছে। সেগুলো ধরলে বেসরকারি ক্ষেত্রে হজের কোটা পূরণ হয়ে গেছে। সরকারি ক্ষেত্রেও গাইড সহ আরো কিছু যুক্ত হবে। মনে হচ্ছে সাড়ে তিন হাজারের মতো কোটা খালি থাকবে। এই সাড়ে তিন হাজার সৌদি আরবকে ফেরত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর অনেক দেশ এবার হজযাত্রীর কোটা ফেরত দেবে। পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া কোটা ফেরত দেবে। আরো অনেক দেশ ফেরত দেবে। কোটা ফেরত দেওয়াটা কোনো গুরুতর বিষয় বলে আমি মনে করি না। এজন্য আগামীতে কোটা পেতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করি না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজের নিবন্ধন শুরু হয়। এরপর আট দফা বাড়ানো হয় নিবন্ধনের সময় এর মধ্যে কোটা পূরণ হয়নি। শেষে নবম দফায় গত মঙ্গলবার নিবন্ধনের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কোটা পূরণ হয়নি। মোট এক লাখ ২০ হাজার ৪৯১ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। কোটা পূরণে এখনো ৬ হাজার ৭০৭ জন বাকি আছে। তবে হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে সাড়ে তিন হাজারের কোটা খালি থাকবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।